চট্টগ্রাম নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকায় কলেজ ছাত্র শাওন বড়ুয়া খুনের ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
চট্টগ্রামে শুধুমাত্র একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে যেভাবে ফাঁদে ফেলে ফটোগ্রাফার শাওন বড়ুয়াকে খুন করা হয়েছে তাতে বিস্মিত হয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পঙ্কজ দত্ত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ইমতিয়াজ আলম মুরাদ, আশহাদুল ইসলাম ইমন, মো. তৌহিদুল আলম, মো. বাহার ও মো. আলমগীর।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পঙ্কজ দত্ত বলেন, ভিকটিম শাওন বড়ুয়া (২৩) চট্টগ্রাম নগরীর এমইএস কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভিকটিম শাওন বড়ুয়াকে চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় একটি গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে ফটোগ্রাফির কথা বলে শাওন হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিরা।
পুলিশ কর্মকর্তা পঙ্কজ দত্ত আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমন ও তৌহিদুল সোমবার রাত ৮টা ২৫মিনিটের দিকে ফোন করে শাওনকে জানান তাঁকে ‘রিসিভ’ করতে মুরাদ নামের এক ছোট ভাই বাহির সিগন্যালের বেপারি পাড়ার ভাঙা পুলের মাথায় অপেক্ষা করছেন। পরে শাওন মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই এলাকায় আসেন। এরপর মুরাদকে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসান শাওন। এ সময় মুরাদ শাওনকে জানান বিয়ের অনুষ্ঠানটা অনান্য আবাসিক এলাকা হয়ে যেতে হবে। সে অনুযায়ী শাওন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশাচালক আলমগীর গাড়িতে করে ইমন, তৌহিদুলকে নিয়ে তাঁদের পেছনে পেছনে যেতে থাকেন। তবে এক পর্যায়ে ফাঁদে পড়েছেন বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শাওন দ্রুত গাড়ি চালিয়ে অনান্য আবাসিকের দিকে চলে যান। এক পর্যায়ে পকেট থেকে ছুরি বের করে মুরাদ বলে উঠেন, কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান নেই, ভালোমতো ক্যামরাসহ ব্যাগটা দিয়ে দাও। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে গাড়ি থামিয়ে মুরাদকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে চান। এর মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মুরাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শাওন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে চান। সুযোগ বুঝে মুরাদ শুরুতে শাওনের উঁরুতে ছুরিকাঘাত করেন। আহত অবস্থায় শাওন কুড়িয়ে কুড়িয়ে চলে যেতে চাইলে মুরাদ মাটি থেকে উঠে শাওনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আরও ছয়টি ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর বাহারকে ফোন দিয়ে শাওনকে মেরে ফেলার বিষয়টি জানালে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে শাওনের ক্যামেরাসহ ব্যাগটি নিয়ে মুরাদসহ দুজনেই পালিয়ে যান। পরদিন মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ শাওনের রক্তাত মরদেহ উদ্ধার করে। এরপরই ঘটনার কারণ বের করতে মাঠে নেমে পড়ে পুলিশের একটি দল।
অভিযানে অংশ নেওয়া চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, হত্যার পর ক্যামেরা নিয়ে পালিয়ে গেলেও শাওনের মুঠোফোনটি নিয়ে যায়নি হত্যাকারীরা। সেই মুঠোফোনই খুনি ও পরিকল্পনাকারীদের খোঁজ পাওয়ার কাজটি সহজ করে দেয়। প্রথমে আমরা জনি বড়ুয়াকে হেফাজতে নিই। তাঁর মাধ্যমে যে নম্বর থেকে বিকাশ করা হয় সেটি বের করি। পরে বিকাশের দোকানে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বের করে বিকাশে টাকা পাঠানো ইমন ও তৌহিদুলকে শনাক্ত করি। এরপর অভিযান চালিয়ে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করি। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় জনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে ‘বিরলতম’ বলেও মনে করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, বহু সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে হত্যার সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আবার অনেক খুনের ঘটনা রয়েছে, যেগুলোর অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ। তবে শাওন বড়ুয়াকে হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীরা কোনও সিনেমা বা ওয়েব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন কিনা এখনও নিশ্চিত হইনি। তবে এটা ঠিক যেভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটি সিনেমাতেই বেশি দেখা যায়।