অবশেষে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানা এলাকায় নিখোঁজ শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার (২৯ মার্চ) নিখোঁজের ৯ দিনের মাথায় ভোর রাতে থানার আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা ধর্ষণের পর শিশু আয়নীকে হত্যা করা হয়েছে।
যদিও নিখোঁজের পর ভুক্তভোগী শিশুর মা বিবি ফাতেমা তার সন্তানকে উদ্ধারে একাধিকবার পাহাড়তলী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এদিকে আসামি মো. রুবেল (৩৫) তার সন্তানকে নিয়ে গেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের এমন অভিযোগ কানে না নিয়ে একটি মামলাও নেয়নি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। নিরুপায় হয়ে শিশুর মা আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ এখনো থানায় এসে পৌঁছেনি। এরইমধ্যে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই শিশু আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা পুলিশের কাছে কোনও প্রতিকার না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শুনার পর যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনোভাবে মুখ খুলছিলেন না রুবেল। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোর রাতে মুখ খুলেন তিনি। জানান শিশু আয়নীকে তিনিই হত্যা করেছেন। বস্তায় ভরে তার মরদেহ ফেলে দেন পার্শ্ববর্তী ডোবায়। তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মরদেহ উদ্ধারের সময় বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানার আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকায় বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হন। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীর শিশুর মা এবং তার নিকটাত্মীয়রাও আসেন। তারা সবাই অভিযুক্ত রুবেলের ফাঁসি দাবি করেন।
এসময় ভুক্তভোগী শিশুর মা বিলাপ করতে করতে বলেন, আমি পুলিশকে বলেছিলাম রুবেল আমার শিশুকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে রুবেল নাকি ভালো ছেলে। রুবেল এ কাজ করতে পারেন না। তোমার মেয়ে প্রেম করে। আমার ১০ বছরের মেয়ে কীভাবে প্রেম করে? আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমার মেয়ের কাপড় পড়বে কে? বেতন পেলে আমার মেয়েকে মিষ্টি-সন্দেশ কিনে দিতাম। এখন কাকে কিনে দেবো? আমার একমাত্র মেয়েকে রুবেল এভাবে হত্যা করল!
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করা হয়েছে। শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আদালত সূত্র জানায়, শিশু আয়নীকে অপহরণের অভিযোগে মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ শরমিন জাহানের আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর মা। এতে একমাত্র আসামি করা হয়- মো. রুবেল (৩৫) নামের একজনকে। তার বাড়ি নগরীর পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকায়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ভুক্তভোগী শিশু নগরীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার মা এবং বাবা দুজনই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
গত ২১ মার্চ ভুক্তভোগী শিশু স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনার দিন এবং তার আগের দিন ভুক্তভোগীকে মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
এদিন আদালত অভিযোগ শুনে মামলাটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন।