ঢাকা, শনিবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আবারও উত্তাল মণিপুর, কুকি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১

ছবি- সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে গতকাল (রবিবার ৯ মার্চ) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কুকি-জো সম্প্রদায়।

পার্বত্য অঞ্চলে, বিশেষত মধ্য-উত্তর মণিপুরের উপজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ কাংপোকপি জেলায় পুলিশের সঙ্গে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

গত শনিবার কাংপোকপিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও কুকি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত হন। আহত অন্তত ৪০ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ছাড়াও রয়েছেন একাধিক নারী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

১ মার্চ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর রাজ্যে অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনকে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী দুই নম্বর জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ মুক্ত করতে গিয়েছিল পুলিশ। এই মহাসড়ক উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম থেকে নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের মধ্য দিয়ে মিজোরাম গেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরের সহিংসতা শুরু হলে কিছুদিন পর থেকে মণিপুরের অংশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেটাই খুলে দিতে গত শনিবার পুলিশি অভিযান শুরু হয়।

আরও পড়ুন  আইএমএফ'র ঋণ: প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ

প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করে রাজ্য সরকারের কিছু বাস এনে কাংপোকপি দিয়ে বাস চালানোর চেষ্টা করা হয়। ইম্ফল-কাংপোকপি-সেনাপতি রুটে বাস চালানোর এই প্রক্রিয়া শুরুর পরে প্রথমে বাসের ওপরে আক্রমণ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা বাস লক্ষ্য করে গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করে। পরে আক্রমণ চলায় নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপরে। এ সময় গুলিতে অন্তত এক বিক্ষোভকারী নিহত হন।

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, কাংপোকপির গামঘিপাই অঞ্চলে বিক্ষোভকারীরা বাসের ওপরে পাথর ছুড়তে শুরু করে। তাদের সরিয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের ভাষায়, ‘সমাজবিরোধীদের’ প্রতিরোধ করতে যত কম সম্ভব শক্তি ব্যবহার করা যায়, সেটাই করা হয়েছে।

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৬ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৭ জন সদস্যও আহত হয়েছেন। সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে যথেষ্ট গুলি চালিয়েছে।

আরও পড়ুন  চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বয়ের তাগিদ তথ্যমন্ত্রীর

বিবৃতিতে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীরা গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ও বড় বড় পাথরের টুকরো ফেলে রাস্তা অবরুদ্ধ করেছিল। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে তারা পুলিশের ওপরে পাথর ছুড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মেইতেই সমাজের একটি নাগরিক সংগঠনের শোভাযাত্রাও এই দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, ওই শোভাযাত্রা নিয়ে কাংপোকপি যাওয়ার অনুমতি তাদের কাছে ছিল না। এই শোভাযাত্রা আদিবাসী অঞ্চলে পৌঁছালে বিপদ আরও বাড়তে পারত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুকি জো সম্প্রদায়ের তরফে তাদের প্রধান নাগরিক সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) বিক্ষোভকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে কুকি-জো কাউন্সিলের ডাকা প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে সমর্থন করেছে।

গতকাল রবিবার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার মেইতেই সম্প্রদায়কে কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চল দিয়ে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। এ কারণেই কাংপোকপিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।

আরও পড়ুন  ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়ল

আইটিএলএফের বিবৃতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ অঞ্চলে ধর্মঘট চলবে জানিয়ে বন্ধ্ সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মণিপুর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রের হাতে চলে যায়। এরপর ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চলাফেরার ওপরে নিয়ন্ত্রণ তোলার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। যার জেরে গত শনিবার পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। মণিপুরে গত দেড় বছরের সহিংসতার জেরে অন্তত আড়াই শ মানুষ মারা গেছেন, গৃহহীন হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লা ৬ মার্চের মধ্যে সব পক্ষকে লুণ্ঠিত অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। এখন পর্যন্ত হাজারখানেক অস্ত্র জমা পড়েছে।

শনিবারের ঘটনা প্রমাণ করল, লুণ্ঠিত প্রায় ছয় হাজার অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগ এখনো মানুষের হাতে রয়েছে। কারণ, পুলিশ নিজেই দাবি করছে, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে তাদের ওপর যথেচ্ছ গুলি চালানো হয়েছে।