ড. মুহাম্মদ ইউনূস, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু নানা কারণেই তিনি বিতর্কিত। বিশেষ করে বিরাজনীতিকরণ এবং অনির্বাচিত সরকারকে সক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম কুশীলব বলে মনে করেন অধিকাংশ রাজনীতিবিদ।
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর তিনি রাজনীতিক দল গঠন করেছিলেন এবং সেই রাজনৈতিক দল গঠনের ধারাবাহিকতায় ১/১১ এর সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। যদিও তার রাজনৈতিক দল অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়, তিনি আর রাজনৈতিক দল নিয়ে এগুননি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে মাইনাস করে একটি সুশীল সরকার প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ড. মঈন উদ্দিন আহমদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পটভূমি ১/১১ এর প্রেক্ষাপট জানতেন এবং আরও কিছু দলিলপত্রে দেখা যায় যে, ১/১১ আনার ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটা ভূমিকা ছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর ড. ইউনূসের সাথে এ কারণেই আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরি হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বয়সসীমা অতিক্রান্ত হলে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে সরকারি চাকরিজীবী বিধি অনুযায়ী বাদ দেওয়া হয়। এই বাদ দেওয়ার আদেশটিকে চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূস আদালতের ধারস্থ হন। কিন্তু আদালত তার বিপেক্ষ রায় দেয়। এর পর থেকেই ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লবিং করছেন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম কথাবার্তা বলে আলোচিত এবং তার কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাথে সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছেন এবং এই সরকারের সঙ্গে তার বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে। তবে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত ইউনূস এখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করছেন।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অন্তত তিন জন ব্যক্তি, যারা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ এবং সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত, তাদের কাছে ড. ইউনূস সরকারে সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত একজন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এই উপদেষ্টার সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেই বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদেরকে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার ব্যাপারে তিনটি বিষয়ে নিষ্পত্তি করা হলে তিনি সরকারকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারেন। যে তিনটি বিষয়ের কথা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে-
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমঝোতা প্রস্তাবের প্রথম দাবি হলো, তার বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির যে মামলার তদন্ত চলছে সে তদন্তটিকে বন্ধ করতে হবে। অবশ্য ড. ইউনূস একা নয়, এই তদন্ত বন্ধের জন্য সুপারিশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও।
পিটার ডি হাস কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনে গিয়েছিলেন এবং এই মামলাটির ব্যাপারে তিনি কথা বলেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকে তাকে কোনও একটি আলঙ্কারিক পদ, যেমন চেয়ারম্যান বা প্রধান উপদেষ্টা ইত্যাদি দেওয়া হোক। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, তার অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংক লক্ষ্যচ্যূত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের অবস্থা এখন আর আগের মতো ভালো নেই। এ কারণেই তার গ্রামীণ ব্যাংকে একটা ভূমিকা থাকা দরকার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে এবং সে মামলাগুলো এখন চলমান রয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, এই মামলাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সরকারের সাথে সমঝোতা দরকার।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং একজন সরকার ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের এই সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছেন।
তবে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে ড. ইউনূসের কোনও গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নাই। তারা মনে করেন, ড. ইউনূসের এটিও একটি কৌশল। তিনি সব সময়ই আওয়ামী বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত এবং তার ভূমিকা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ।