চীনের গ্রামাঞ্চলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যুর প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি। কারণ, ভাইরাসটি বড় শহরের চেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, দেশটির উত্তর শানসি প্রদেশের জিনঝো অঞ্চলে কফিন নির্মাতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কফিন নির্মাতারা বিবিসিকে বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কারিগরদের কফিন তৈরি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এক গ্রামবাসী বিবিসিকে জানান, কফিনগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি হাস্যরস করে বলেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শিল্প ছোট্ট সৌভাগ্য অর্জন করেছে। তাদের ভালো উপার্জন হচ্ছে।
ভাইরাসটি বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পড়ে চীনে কোভিড মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। চীন গত ডিসেম্বরে কঠোর বিধিনিষেধ বাতিল করার পর জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিড সংক্রমিত হয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় মহামারি বিশেষজ্ঞ উ জুনিয়উ অনুসারে, চীনে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ১৩ হাজার কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গত ডিসেম্বর থেকে গণনা করা হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজার। এসব মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। গ্রামীণ এলাকায় হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা না থাকায় অনেক মানুষ বাড়িতে মারা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই গণনা করা হচ্ছে না। এমনকি গ্রামের মৃত্যুর সংখ্যার জন্য কোনো সরকারি হিসাবও নেই।
বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে, দেশটিতে দ্রুতগতিতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদক একটি শ্মশান পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে ব্যস্ততা দেখেছেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্পর্কিত জিনিসপত্রের চাহিদা বর্তমানে অন্য সময়ের চেয়ে দুই বা তিনগুণ বেশি। শানজির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসকেই দায়ী করেছেন।
তারা বলেন, বয়স্ক শরীর কোভিডের ধকল সহ্য করতে পারে না।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাজসজ্জার জিনিসপত্র বোঝাই একটি ট্রাককে অনুসরণ করে বিবিসির প্রতিবেদক ওয়াং পেইওয়েই নামের একজনের সঙ্গে কথা বলেন। তার শ্যালিকা মারা গেছেন। পেইওয়েইয়ের ওই শ্যালিকা ৫০ বছর ধরে গুরুতর ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন এবং তারপরে তিনি করোনভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যান।
পেইওয়েই বলেন, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর তার শ্যালিকার প্রচণ্ড জ্বর হয়েছিল এবং তার অঙ্গগুলো অকার্যকর হতে শুরু করেছিল।
প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ এই সময়ে চন্দ্র নববর্ষ উদযাপন করতে তাদের নিজ শহরে ফিরে যায়।
গ্রামের ছোট একটি ক্লিনিক পরিচালনা করেন চিকিৎসক ডং ইয়ংমিং। তিনি মনে করেন সেখানকার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা ইতোমধ্যেই কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, সব গ্রামবাসী অসুস্থ হলে আমাদের কাছে আসে। যারা মারা গিয়েছে তাদের বেশিরভাগের কোভিড রোগ ছিল।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলে যারা মারা যায়, তাদের মাটি চাপা দেওয়া হয়। কৃষকরা তারপর তাদের পূর্বপুরুষদের কবরের ঢিবির চারপাশে শস্য রোপণ এবং পশুপালন চালিয়ে যায়।
তবে এখানকার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের জীবন-মৃত্যু নিয়ে দার্শনিক মনোভাব পোষণ করেন। এক কৃষক বলেন, ‘মানুষ এখনও তাদের বরাবরের মতো নতুন বছর উদযাপন করবে।
মৃত্যু নিয়ে মানুষের চিন্তা করা উচিত নয়। আপনি লুকিয়ে থাকলেও সংক্রমিত হবেন। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতোমধ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এবং আমরা ভালো আছি।
সূত্র- বিবিসি