ঢাকা, মঙ্গলবার - ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের আহ্বান টিআইবি’র

ফাইল ছবি

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বাজেট-পরবর্তী এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আপনি যদি বৈধ উপায়ে আয় করেন তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ। আর যারা কালো টাকার মালিক, তাদের বিচার করা বা শাস্তি করার কথা, সেই জায়গায় পুরস্কৃত করা হচ্ছে। কালো টাকার মালিকের জন্য ১৫ শতাংশ, এটা সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক। সরকার পরিষ্কার ভাষায় বলছে তোমরা সারা বছর যেভাবে পারো দুর্নীতি করো। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করো। তোমাদের কোনো অসুবিধা নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বছর শেষে তোমাদের কালো টাকা বৈধ করে দেবে। তোমাদের লাইসেন্স দিয়ে দেবে। এটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতি সহায়ক।

আরও পড়ুন  শেখ হাসিনা আবারও দেশে ফিরবেন, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জয়

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালো টাকার দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নৈতিক স্খলন এবং দুর্নীতি পরায়ণ হওয়ার পথ উন্মোচন করা হচ্ছে। সরকার বড় গলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা জানায়, এটা ক্রমাগত পারিবারিক ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা ঘোষণা করে পুনরাবৃত্তি করেন। যেটার প্রতিফলন তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে আছে, সেটা কিন্তু পদদলিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি এবং এর আওতায় ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতি সহায়ক একটি উদার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের শঙ্কা।

আরও পড়ুন  ভিসানীতিতে যুক্ত হবে গণমাধ্যমও: পিটার হাস

অন্যদিকে টিআইবি এক সংবাদ বিবৃতিতে দেশের অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতের কার্যক্রম গতিশীল রাখার যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী যেভাবে ঘোষিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডেটা ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিভিএস চালু করার ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ ঘোষণায় আইনি জটিলতা এবং করদাতাদের অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে যেভাবে অপ্রদর্শিত অর্থে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনা বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হলো তা সত্যিই হতাশার। কালো টাকাকে সাদা করার এমন সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে যেন সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সহজ করে বললে, সরকার দায়মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রকারান্তরে নাগরিককে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। রাজস্ব বাড়ানোর খোঁড়া যুক্তিতে দুর্নীতি, অনৈতিকতার গভীরতর ও ব্যাপকতর বিকাশকে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হচ্ছে। দুর্নীতিকে লাইসেন্স দেওয়ার এই প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ হবে, এটাই প্রত্যাশিত।

আরও পড়ুন  ভারত আ. লীগ সরকারকে চায় এটা তো ওপেন সিক্রেট: সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র

টিআইবি বলছে, বিষয়টি একজন সুনাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক, একইসঙ্গে তা সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। এ প্রক্রিয়ায় নৈতিক আপস করে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ের স্বপ্ন স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদে কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। যার বড় উদাহরণ হলো দুই বছর আগে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। আবার দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও, কেউ সে সুযোগ নেননি। তাই বাজেটে এমন সুযোগ আসলে কাদের স্বার্থে রাখা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা মোটেই অমূলক নয়।

কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

ট্যাগঃ

এ বিভাগের আরও

সর্বশেষ