ঢাকা, বুধবার - ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আলোচিত সংবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলনে চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন অনেক

ফাইল ছবি

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চীনের ভূমিকা কী ছিল- এ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পর এই আন্দোলনে সহিংস রূপের প্রেক্ষিতে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই আন্দোলনের নেপথ্যে চীনের কোনও ভূমিকা আছে কিনা। কারণ প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় বাংলাদেশে চীন যা যা চেয়েছিল তার কিছুই অর্জিত হয়নি। চীন যে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সাথে দেন দরবার করছে সেই প্রকল্প এখন বাংলাদেশ চীনের সাথে করছে না বলেই মোটামুটি নিশ্চিত। অন্তত সরকারের নীতি নির্ধারক মহল সে রকম ইঙ্গিত দিয়েছে।

সরকারের নীতি নির্ধারক মহল বলেছে, যেহেতু ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদী রয়েছে, কাজেই বাংলাদেশ সবচেয়ে উপকৃত হবে যদি এই প্রকল্পটি ভারতের সাথে তৈরি করা যায়। এছাড়াও ভারতের জন্য স্পর্শকাতর এবং অস্বস্তিকর এমন কোনও প্রকল্পই চীনের সঙ্গে করতে রাজি নয় বাংলাদেশ। তার প্রভাব কোটা সংস্কার আন্দোলনে পড়েছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও চীনের পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্যকে মনগড়া ভিত্তিহীন এবং অসত্য বলে এখন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন  প্রথম আলো'র সম্পাদককে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাম্প্রতিক সময়ে কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের এই বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তিনি ইন্টারনেটসহ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।

অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ভারত ঘনিষ্ঠতার কারণে দেশটিকে চাপ দেওয়ার জন্য এই আন্দোলনের নেপথ্যে চীনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে এ ধরনের সংবাদ ব্যাপক আকারে প্রকাশিত হচ্ছে।

ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ভারত এবং চীনের বাংলাদেশ নিয়ে দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ কোটা আন্দোলনের সহিংসতা। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোনো কিছুই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিষয়টি বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। চীন কখনও কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না এবং এই ধরণের সহিংসতার ক্ষেত্রে তো নয়ই। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় দুই দেশের উষ্ণতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা আরও সুদৃঢ় ভাবে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এগুলো মনগড়া এবং ভিত্তিহীন বিশ্লেষণ বলেই তারা মনে করছেন।

আরও পড়ুন  কোটা আন্দোলন তাণ্ডবে দেশ ছাড়েন দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি

তবে বিভিন্ন দেশে কিছুদিন ধরেই চীন তার রাজনৈতিক প্রভাব বলয় বিস্তার করতে শুরু করেছে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ। মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনের সমর্থক রাজনৈতিক দল মুইজ্জু এর নেতৃত্বে বিজয়ী হয়েছে এবং সেখানে ভারতের অবস্থান অনেকটা কোণঠাসা।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনা শুরু হবার আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা হয়। বিএনপির একাধিক নেতা চীনা দূতাবাসের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করেন। মূলত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নীতি থেকে বিএনপি আস্তে আস্তে সরে যেতে শুরু করে এবং চীনের সঙ্গে একটি গভীর এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা কিংবা বাংলাদেশকে চাপে ফেলার জন্য এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে কোনও কোনও মহলের প্রশ্ন রয়েছে।

আরও পড়ুন  ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা আসছেন দুই দেশের দুই মন্ত্রী

বিশেষ করে এবারের যে তাণ্ডব এবং নাশকতাগুলো হয়েছে তা সব সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ঘিরে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বিটিভি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের চীন নির্ভরতা আবার বাড়তে পারে। এই ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত ৭৭ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন এই ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়েও বেশি। এই ক্ষতির পরিমাণ পুনরদ্ধার এবং অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ হয়তো চীনের দিকেই ঝুঁকতে পারে-এমন একটি প্রচেষ্টা থেকে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে চীনের কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত কূটনীতিকরা মনে করছেন এ ধরনের ঘটনা ঘটা একেবারেই অসম্ভব।

ট্যাগঃ

আলোচিত সংবাদ