বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৭৫ ভাগই হয় বাংলাদেশে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হয় এই মাছ। কিন্তু ইলিশ রপ্তানিতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বরফ দেয়া কিংবা লবণ দেয়া ইলিশের রপ্তানিমূল্য তুলনামূলক কম। তাজা ইলিশ রপ্তানি করা দূরহ।
তবে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ অপরিবর্তিত রেখে প্রথমবারের মতো এই মাছকে কৌটাজাতকরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তারা। মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের অর্থায়নে উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সামুদ্রিক টুনা মাছও কৌটাজাত করা যাবে।
গবেষক দলের প্রধান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের অধ্যাপক কাজী আহসান হাবীব বলেন, ইলিশ মাছের অতিরিক্ত কাঁটা এবং মাংসের চর্বি পচনশীল। ফলে এটি বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। তবে আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে ইলিশের কাঁটা ও চর্বি নরম হয়ে মাংসের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পচন রোধ হয়, আবার মাছের কাঁটা বেছে খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এদিকে ইলিশের নরম কাঁটা শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করবে। এতে প্রক্রিয়াজাত করা ইলিশ আরও বেশি পুষ্টিকর হয়ে ওঠে।
গবেষক আহসান হাবীব বলেন, এই প্রযুক্তিতে সহজলভ্য যন্ত্রপাতি ও উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজেই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এই গবেষক বলেন, মূলত পণ্যবহুমুখী ও দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে কৌটাজাতকৃত ইলিশ ও টুনা মাছের স্বাদ, মান, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধির জন্য আরও কাজ চলছে। মাছের স্বাদ ও গন্ধ অপরিবর্তিত রেখে এই মাছগুলোকে আমরা একাধিক ফ্লেভারে ক্রেতাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চাই। কয়েক মাসের মধ্যে সেই কাজটি শেষ হবে। এরপর আমরা এই প্রযুক্তিটি মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করব। তারপর পর্যায়ক্রমে দেশের প্রান্তিক মাছ প্রক্রিয়াজাতকারী উদ্যোক্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ওই প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৌটাজাত ইলিশ ও টুনা মাছ বাজারজাত করা হবে।
গবেষক দলের অপর সদস্য ফিশারিজ অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা বলেন, বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর টুনা মাছ ধরা পড়ে। দেশে এই মাছ ততটা জনপ্রিয় নয়। তবে বিদেশের বাজারে কৌটাজাত টুনা অনেক জনপ্রিয়। কৌটাজাত করার পর এই মাছ রপ্তানি করা গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
গবেষণাটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রোকেয়া বেগম বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গেলে বিশ্ব বাজারে বেশ কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্য করার দিকে নজর দিতে হবে। সেদিক বিবেচনায় এই প্রযুক্তি ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে। তবে প্রযুক্তিটি বাণিজ্যিক পরিসরে এলে এর গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বোঝা যাবে।