চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে খালের পাড়ে নির্মিত হচ্ছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সড়ক এবং ৫০ কিলোমিটার ফুটপাত।
প্রতিটি রাস্তার প্রশস্ত হচ্ছে ১৫ ফুট বা তার বেশি এবং ফুটপাতের প্রশস্ত হচ্ছে পাঁচ ফুট। এসব সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের ফলে বদলে যাচ্ছে সেখানে বসবাসকারীদের জীবনযাত্রার মান। এসব সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের ফলে সেসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে ২৭টি খালের পাড়ে বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক এবং সাড়ে ৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী।
বুধবার (৫ এপ্রিল) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন নগরীর বিভিন্ন খালের পাড়ে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় রাজাখালী খালের আশপাশের এলাকায় জোয়ার এবং বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেই সাথে রাজাখালী খাল সংলগ্ন এলাকাসমূহে চলাচলের উপযোগী ছিল না। সম্প্রতি সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণ হওয়া এসব সড়ক ও ফুটপাতে গত বছরও চলাচল ও হাঁটার উপায় ছিল না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পাবিদ ও সিডিএ’র বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে নদী, খাল এবং এর আশপাশের এলাকার সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়। খালের মধ্যে ওয়াটার বোট, খালের পাড়ে হাঁটার এবং বসার ব্যবস্থা করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে এখন যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এই প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের ফলে খাল পুনরায় দখলের আশঙ্কা থাকবে না। আর বর্তমানে খালের মধ্যে যে ময়লা-আবর্জনা ফেলার মানসিকতা, সেটিও বন্ধ হবে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, খালের পাড়ে সড়ক নির্মাণের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে- মানুষের হাঁটার অভ্যাস হবে। কাজ শেষে খালের প্রশস্ত এবং নাব্যতা যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে অনায়াসে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করা যাবে। এটা চালু করা গেলে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নগরীর সবগুলো খালে এই পরিকল্পনা নিলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। যেসব খাল এখনো বেদখল রয়েছে, তা দ্রুত উদ্ধার করে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নগরীর ২৭টি খালের পাড়ে সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে আমাদের। এ প্রকল্পে মোট ৩৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়ক এবং ৫০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক এবং সাড়ে ৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খালের পাড়ে রাস্তা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে খালের কাজ করতে গিয়ে আমাদের প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ এমনভাবে খাল দখল করেছে সেখানে আমাদের কাজ করার উপায় নেই। কাজ করার জন্য মালামালও নিতে পারছি না। অনেক জায়গায় ঠিকাদাররা কাজ ফেলে চলে গিয়েছে। খালের পাড়ে এসব রাস্তা ও ফুটপাত তৈরি সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে খাল পরিষ্কার করার সময় সহজেই গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ২৭টি খালের পাড়ে সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। খালগুলো হচ্ছে, গয়নাছড়া-১ খাল, কলাবাগিচা খাল, মরিয়ম বিবি, ব্রিক ফিল্ড পয়েন্ট, রাজাখালী-১, রাজাখালী-২, রাজাখালী-৩, আজব বাহার খাল, গয়নাছড়া খাল-২, শীতলঝর্ণা, রামপুর, গুপ্তা, মহেশ খাল, চশমা খাল, নয়ারহাট, টেকপাড়া, সদরঘাট-১, সদরঘাট-২, ফিরিঙ্গীবাজার, বাকলিয়া, নাসির খাল, ডোমখালী, মোঘলটুলি, ত্রিপুরা, মেয়রগলি, বামনশাহী ও খন্দকিয়া খাল।