বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নাটক শুরু করেছে সরকার এমন মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলেন, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নাটক শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার যখন রাজনীতি করার সময় আসবে, তখন তিনি রাজনীতি করবেন। তার রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দল।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের উদ্দেশ্য ভালো নয় বলে মনে করেন ফখরুল। বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) উদ্দেশ্যে খারাপ। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আটক হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সঙ্গে এবার একসঙ্গে জেলে ছিলাম। উনি ছিলেন এক বিল্ডিংয়ে আর আমি ছিলাম অন্য বিল্ডিংয়ে। এরপর আমাদের ডিভিশনে দিয়েছে আর উনাকে হাসপাতালে দিয়েছে। কিন্তু এবার প্রচণ্ড বেশি নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনের কথা আমরা বলতে চাই না। নির্যাতন হবেই, সেটা আমরা জানি। কারণ আমরা সত্যের পথে আছি, গণতন্ত্রের পথে আছি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, নির্যাতন তারা করবে, নির্যাতন করেই তারা টিকে আছে। এজন্য তাদের সরাতে হবে। এটাই হচ্ছে, বিএনপির প্রধান কাজ। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। দেশের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার তারা সবাই অনেক কষ্টে আছেন।
নিত্যপণ্যের দামে জনজীবন বিপর্যস্ত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি, টিসিবির লাইনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের প্রোটিন দিতে হয়, এজন্য প্রতিদিন তাদের অন্তত একটি করে ডিম খেতে দিতে হয়। সেই ডিম এখন ছোঁয়া যায় না। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও কেজি প্রতিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, চিনির দাম বেড়েছে, লবণের দামও বেড়েছে। শহরগুলোতে বাসা ভাড়া বেড়েছে। লোকজন এখন বাধ্য হয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠানো অসম্ভব হয়ে গেছে। সবকিছুর ব্যয় বেড়ে বহুগুণ হয়ে গেছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জনগণের অসুখের দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই, তারা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তাই কেউ জনগণের কথা বলতে পারে না। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি করা যাবে না। কারণ সংবিধানে নেই। তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলে, তখন কি সংবিধানে ছিল? ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন জনগণ এটা চায়, এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে। তখন তিনি পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাশ করে সংবিধানে সংযোজন করেছেন। তারপর তার অধীনে নির্বাচন হয়েছে।
তাঁতী দলের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখা ও তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জিয়াউর রহমান তাঁতী দল তৈরি করেছিলেন। এখন যারা তাঁতী দল করছেন, তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন। কীভাবে তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখবেন, কীভাবে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবেন সেই বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। শুধু মূল দলের সঙ্গে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিলে কাজ হবে না। আপনাদের তাঁতীদের জন্য কাজ করতে হবে। তাতে করে তাঁতীরা আপনাদের সঙ্গে বেশি বেশি সম্পৃক্ত হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্য সচিব হাজী মুজিবুর রহমান প্রমুখ।