ঢাকা, শনিবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলনের নামে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ছবি- সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ শহীদ (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৪জন।

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছালে এ সংঘর্ষ হয়।

এদিকে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ের মধ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর রাজনৈতিক কার্যালয়ে। শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে থাকা দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। মহিবুল হাসান চৌধুরী এ সময় বাড়িতে ছিলেন না, তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। মেয়রের বাড়িতে হামলার ঘটনা সামাল দিতে গুলি চালিয়েছে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের একটি অংশ থেকে এসব হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর পাল্টা হামলা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মেহেদীবাগের বাসায়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে মীর হেলালের চট্টেশ্বরী রোডের বাসার নিচে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা।

নিহত শহীদ চকবাজারের রাসুলবাগ আবাসিক এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। তাঁর মরদেহ নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে রয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজন শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। তাঁর নাম জানা যায়নি; অবস্থা আশঙ্কাজনক।  তিনি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুলিবিদ্ধ অন্য তিনজনের মধ্যে একজনের নাম আব্দুস সাত্তার। তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন  সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তারেক আজিজ বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে প্রথমে এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। তার পর শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান বলেন, সন্ধ্যায় কিছু দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করে। এ সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।

শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস রাহুল দাশ বলেন, তারা বাড়ির সামনে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে। বাড়ির প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাড়িতে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

যেভাবে হামলা শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে-
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে দেওয়ানহাট হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল ষোলশহর এলাকায় পৌঁছে। ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এ সময় মিছিল থেকে একটি দল চশমা হিলের দিকে ঢুকে পড়ে। মিছিল করে তারা শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে যায়। সেখানে তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। বাড়ির প্রধান গেট ভেঙে ফেলে। নেতাকর্মীর বসার জন্য রাখা অর্ধশত চেয়ার ভাঙচুর করে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট তারা সেখানে অবস্থান করে।

হামলাকারী ৪০ থেকে ৫০ জন-
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল রড, লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে প্রথমে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির গেটে আক্রমণ করে। লাথি দিয়ে গেট খুলে ফেলে। একটি অংশ তখন চশমা হিলের রাস্তা পাহারা দেয়, আরেকটি ভাঙচুর করে। তিনটি গাড়ি ভাঙচুরের পর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাড়ির দরজা-জানালাও ভাঙচুর করে।

আরও পড়ুন  সংসদ ভবন এলাকায় ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত

এমপি বাচ্চুর কার্যালয়ে আগুন-
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের একটি অংশ থেকে নগরের টাইগারপাসে পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং ওয়াসা এলাকায় চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা জিইসি মোড়ে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিকেল ৩টা থেকে নিউমার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন আন্দোলনকারীরা। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে তারা একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এর পর তারা এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসে আগুন দেয়। দুর্বৃত্তরা তাঁর কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে ও পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।

সিটি মেয়রের বাসায় হামলা, পুলিশের গুলি-
শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিমের বাসভবনেও হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মেয়র বাসায় ছিলেন। বাসার সামনে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ করতে গুলি চালায়। এ সময় বাড়ইপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুস সাত্তার নামে এক যুবক। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে কার গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন, তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি। এ ঘটনার পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশ, আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।

মেয়রের এপিএস দুলাল চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলার পর মেয়রের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রধান ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু বাড়ির সামনে থাকা পুলিশ গুলি ছুড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মেয়র মহোদয় অক্ষত আছেন।

আরও পড়ুন  করোনা টিকা আবিষ্কার করে চিকিৎসায় নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও এমপির বাসায় পাল্টা হামলা-
শিক্ষামন্ত্রী ও সিটি মেয়রের বাসায় হামলার পর বিএনপি নেতাদের বাসায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। তারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মেহেদীবাগের বাসায় হামলা চালিয়ে গাড়িতে আগুন দেয়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে মীর হেলালের চট্টেশ্বরী রোডের বাসার নিচে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। নগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ উল্লাহর পাঁচলাইশের বাসায় গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের বাদশা মিয়া চৌধুরীর বাসায় ভাঙচুর করার পাশাপাশি পার্কিংয়ে থাকা বিভিন্ন ফ্ল্যাট মালিকের অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি যে ভবনে থাকি, সেখানে আমার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাকি ২০টি ফ্ল্যাটের মালিক অন্যরা। ভবনের পার্কিংয়ে থাকা সব গাড়ি ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা। বাসায় আমি ছিলাম না। আমার মা ও বোন ছিল। তারা খুব উদ্বিগ্ন। আমার তিনতলার ফ্ল্যাটেও হামলা চালিয়ে কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরও

সর্বশেষ