চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আবারও ঘুরেফিরে এল সেই পুরোনো কাসুন্দি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী।
ভোট আসলেই ‘কালুরঘাট সেতু’কে নির্বাচনী বৈতরণী পেরোনোর হাতিয়ারে পরিণত করেন রাজনীতিবিদরা।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর শোক ছাপিয়ে ভোটের মাঠে সরব হয়ে উঠেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিয়ে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এরমধ্যে কয়েকজন প্রার্থী ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বড় আকারের পোস্টার সাঁটিয়েছেন নগর ও বোয়ালখালীর আনাচে কানাচে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী সুকুমার চৌধুরী ও প্রবাসী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন সেতু নির্মাণের দাবি ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেতুর ছবিসমেত বড় আকারের পোস্টার লাগিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সুকুমার চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার আস্থাভাজন তা দেখতে হবে। মনে করছি, প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জনে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন করতে পারবো। যদি সাফল্য অর্জন করতে পারি।
এছাড়াও প্রবাসী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনও সেতুর দাবি করে বড় বড় পোস্টার লাগিয়েছেন। এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও এখন নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন । কালুরঘাট সেতুর দাবি তুলে মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে কালুরঘাট সেতুর দাবি করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই দাবি দ্রুত আদায় করে নিতে হবে।
জাতীয় সংসদের নির্বাচন আসলেই জনগণের ভোট হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রার্থীরা। ভোট হাতিয়ে নেওয়ার পর আর হয় না কালুরঘাট সেতু। তবে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সেতু নির্মাণের দাবি জোরালো হয়। এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল।
২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান তিনি। বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান করা হবে। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেও সেতু দেখে যেতে পারেননি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, সেতু নির্মাণের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দুই সংসদ সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ। সেতু দেখে যেতে পারেননি বর্ষীয়ান এই দুই সংসদ সদস্য। ভোট ঘনিয়ে আসায় আবারও কালুরঘাট সেতুর দাবি তুলে মানুষের আবেগ-অনুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের (২০০৮-২০১৩) প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে কর্ণফুলী নদীর ওপর আরেকটি কংক্রিট সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হযরত শাহ আমানত সেতুর (তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল মতে, আগামী ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন।
তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিএনপি এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন নেতারা। পিছিয়ে নেই প্রয়াত দুই সংসদ সদস্যের স্ত্রীরাও।