ঢাকা, বৃহস্পতিবার - ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চিনি নিয়ে ছিনিমিনি

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

চিনির চাহিদা থাকলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ চিনি উৎপাদন করলেও সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি ছাড়ছে না। বেশি দাম পেলেই তারা চিনি বিক্রি করছে। অথচ সরকার চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল প্রতি কেজি ১০৭ টাকা।

ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন মিলে যে চিনি মজুত রয়েছে তা দিয়ে সারা বছর চলবে। তারপরও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সিটি গ্রুপ থেকে কোনো চিনি দিচ্ছে না। আর মেঘনা গ্রুপ ডিলারদের বলছে, সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে নিলে চিনি দেবে। এর কমে তারা কাউকে চিনি দিচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। যাতে রজমানে বেশি দামে চিনি বিক্রি করা যায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কৃষি মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউনহলসহ বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে ডিলার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের হারুন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি খোলা চিনি বিক্রি করছেন ১২০ টাকা কেজি দরে। তাও আবার বেশি দামে কেনা ফ্রেশ কোম্পানির চিনি। তাদের প্যাকেট চিনি নেই। সিটির কোনো চিনি নেই। তার কাছে কোনো প্যাকেটজাত চিনি নেই।

কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের জসিমও জানান, চিনি নেই। তবে ঈগলের লাল চিনি বিক্রি করছে ১৫০ টাকা কেজি। সরকারের চিনি ৯২ টাকা। তারা বলছে, সরকার থেকে চিনি কিনে প্যাকেট করে বিক্রি করা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেটও দেখে গেছে গায়ের রেট ১৫৫ টাকা।

বাজারে চিনি না পাওয়া প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারে মেঘনা গ্রুপের ডিলার মেসার্স জামাল ট্রেডার্সের মালিক মো. জামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন কোনো চিনি নেই। ফ্রেশ এক মাস ধরে চিনি দিচ্ছে না। গায়ের রেট ১০৭ টাকা, সেই রেটেই নিতে বলছে কোম্পানি থেকে। মিল থেকে দোকানে আনতে দুই টাকা খরচ আছে কেজিতে। তাহলে কত দামে বিক্রি করব? সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাজার ঘুরে গেছে। তাদেরকেও একই কথা বলেছি, চিনি পাচ্ছি না। এ জন্য এক মাস থেকে ব্যবসা নেই। কোম্পানির জিএম আখতারুজামানের সঙ্গে সরাসরি কথা হচ্ছে। তারপরও চিনি দিচ্ছে না। আর কোম্পানির এজিএম জয়নাল আবেদিন বলছেন, চিনি নেই। তবে ১০৭ টাকা রেটে নিলে পাওয়া যাবে। দাম বাড়ানোর পর থেকেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন  দেশ ছাড়ার আগে নয়াদিল্লির সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথন

বাজার কীভাবে স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার কঠোরভাবে ধরলে তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। কারণ মেঘনার কাছে যে চিনি আছে সারা বছর চলবে। তারপরও নির্ধারিত দামে চিনি দিচ্ছে না। দাম বৃদ্ধির জন্যই তারা এ কাজ করছে। এজন্য ভোক্তারা চিনি পাচ্ছে না।

চিনি আছে কি না জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে সিটি গ্রুপের ডিলার এটি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সেলিম জানান, চিনি নেই এক মাস থেকে। কোম্পানি দিচ্ছে না। এক ছটাকও নেই। না দিলে বিক্রি করব কীভাবে?

পাইকারি পণ্য বিক্রেতা মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের মো. সিদ্দিকও জানান, চিনি নেই। কারণ কোম্পানি থেকে দেয় না। তাই বিক্রি করতে পারছি না। কেন দিচ্ছে না তাদের কাছে জানেন। তাহলে আসল চিত্র জানা যাবে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সোনালী ট্রেডার্সের মালিক মো. আবুল কাশেমও বলেন, চিনি নেই। আমি সব কোম্পানির পণ্য রাখি। পাইকারি ও খুচরাও বিক্রি করি। কিন্তু চিনি নাই অনেক দিন থেকে, কোনো কোম্পানি দেয় না। দাম বাড়ানোর পর থেকেই দিচ্ছে না। আরও দাম বাড়ানোর জন্য আটকে রাখছে।

আরও পড়ুন  শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ডোনাল্ড লু'র চিঠি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেট এবং টাউনহলেও একই চিত্র। চিনির ব্যাপারে জানতে চাইলে টাউনহলের মনির জেনারেল স্টোরের মো. আনোয়ার বলেন, চিনি নেই, কোম্পানি থেকে পাই না। কবে থেকে নেই জানতে চাইলে বলেন, এক মাস থেকে। তীরের কোনো চিনি পাই না। দাম বাড়িয়ে ১০৭ টাকা কেজি করার পরই চিনি হাওয়া। সংকট সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকেই।

তিনি বলেন, সিটি কোম্পানির তীর চিনি ১০৭ টাকা কেজি। এই চিনির সঙ্গে লবণ ধরিয়ে দিচ্ছে। লবণ না দিলে তারা চিনি দেয় না। তাই নিচ্ছিও না, বিক্রিও করছি না। তবে লাল চিনি ১৪০ কেজি বিক্রি করছে।

একই মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের মো. বাবুল মিয়া বলেন, ফ্রেশ ও সিটির কোনো চিনি নেই। তারা বলছে, বাজারে চিনি নেই। তাই দিতে পারছে না। তবে সেবা মার্কেটিং এর ঈগল চিনি প্রতি কেজি ১৪৫ টাকা খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। এটা কেমন তা আল্লাহ মাবুদ জানে।

বিক্রেতা সেজে এই প্রতিবেদক মেঘনা গ্রুপের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জয়নাল আবেদিনের কাছে ৫ বস্তা চিনি চাইলে তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখি ডিলারের কাছে আছে কি না? এরপর তিনি বলেন, তারা মিল গেটে প্রতি কেজি চিনি ১০৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। একপর্যায়ে তিনি দাবি করেন, মিলে এক মাস থেকে সাপ্লাই নেই। এ কথা বলেই তড়িগড়ি করে লাইন কেটে দেন।

আরও পড়ুন  ফেসবুকে ‘পোক’ ব্যাক করার আগে ভাবুন, নয়তো বিপদ

পুলিশের বিশেষ শাখার (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, মেঘনা গ্রুপের চিনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অভিযোগ করলে তা আমলে নিয়ে তদন্ত করব।

সিটি গ্রুপ ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে সম্প্রতি তিনি জানান, চিনি নেই, এটা ফালতু কথা। কার কত চিনি লাগবে বলেন।

পরে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে ২ লাখ টনের মতো লাগে। অন্যান্য মাসে দেড় লাখ টনের মতো লাগে। তারপরও গত আগস্ট থেকে দেশে চিনির সংকট চলছে। গ্যাস সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তখন থেকেই চিনির বাজার অস্থির হয়ে করে তোলা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। মিলমালিকদের দাবির মুখে সরকার বাধ্য হয়ে গত ১৭ নভেম্বর প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ও খোলা চিনি প্রতি কেজি ১০২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সিটি, মেঘনাসহ বিভিন্ন রিফাইনারি কোম্পানি পরিশোধন করে বাজারে সাদা চিনি বিক্রি করে। প্রতিদিন এসব কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার টনের মতো। তবে সম্প্রতি কিছুটা কমেছে। আর বাজারে চাহিদা ৫ হাজার টনের মতো। তারপরও খুচরা ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে না।

ট্যাগঃ

আলোচিত সংবাদ

এ বিভাগের আরও

সর্বশেষ