ঢাকা, শনিবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তদন্ত ছাড়া কারও চাপে বীমার টাকা দেবেন না: প্রধানমন্ত্রী

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারপ্রধান যথাযথ তদন্ত না করে কারও চাপের মুখে অগ্নিকাণ্ডে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শও দিয়েছেন।

বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বীমা শিল্পটা যাতে ভালোভাবে গড়ে ওঠে, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বীমা কোম্পানিও অনেক বেড়েছে। সব ক্ষেত্রেই কিন্তু বীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা এর প্রচারটা ভালোভাবে করুন। বীমা পলিসি যাতে মানুষ গ্রহণ করে, সে জন্য প্রচারটা খুব দরকার। এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের দিয়ে কাজ করানো হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।

তিনি বলেন, মানুষকে যদি সচেতন করা যায়, তবে তারা আরও উদ্বুদ্ধ হবে এবং বীমা করতে আরও আন্তরিক হবে। আসলে আমাদের দেশের মানুষের অনীহা আছে। থার্ড পাটি ইনস্যুরেন্সের কথা বলা হলো গাড়িতে, আসলে এটা যে কত ক্ষতি করে, আমি নিজেও ভুক্তভোগী। যথাযথ বিমা ছাড়া সড়কে কোনো পরিবহন যেন না চলে, সেটা আমরা দেখবো। আমরা বীমা খাতকে আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডাস্ট্রিজ যে বিীমা করে না, সেটা ঠিক না। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, গার্মেন্টসে শুধু আগুন লাগত। হঠাৎ আমার নজরে পড়ল, কোনো কোনো গার্মেন্টস আমি নাম বলতে চাই না, কিছু দিন পরপরই খালি তাদের আগুন লাগে। আর তাতেই এসে টাকা চায়, মোটা অঙ্কের টাকা চায়। তখন আমি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে বললাম, এখন টাকা দেবেন না, আমি তদন্ত করব। আমি আলাদাভাবে বিশেষভাবে তদন্ত করব।

আরও পড়ুন  মারা গেলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

তিনি বলেন, তদন্তের পর দেখা গেল ওই কাখানারই এক শ্রমিক, একটা মেয়েকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে, যেখানে কিছুই নেই, কিন্তু আগুন দিয়ে ইনস্যুরেন্সের মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসে আছে। ওই মেয়েকে যখন ধরা হলো, সে স্বীকার করল যে তাকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে। ঘন ঘন এত আগুন একটা জায়গায় লাগছে কেন? ইনস্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায় টাকা পায়।

বীমা কোম্পানির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে, সতর্ক থাকা দরকার, কতটুকু ক্ষতি হলো। যথাযথভাবে তদন্ত করা দরকার। যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারো চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না। আগুন লাগলো এক ফ্ল্যাটে, সেই ফ্ল্যাটে কোনো ইনস্যুরেন্স করা ছিল না, কিন্তু পাশের একটি ফ্ল্যাটে ইনস্যুরেন্স ছিল, সেখানে হয়তো কিছুটা আগুন লেগেছিল, কিন্তু মোটা অঙ্কের একটা টাকা বের করে নিয়ে গেলো। একটি ফ্ল্যাটে কি ৪০ কোটি টাকার মতো সম্পদ থাকতে পারে? ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ৪০ কোটি টাকা দেবে। এর জবাব আছে আপনাদের কাছে, টাকাটা কীভাবে গেলো সাধারণ বীমা থেকে?

আরও পড়ুন  সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

তিনি বলেন, এই ধরনের একটি ঘটনা এসেছে সামনে, আমি এরও একটা তদন্ত করাব, কত সম্পদ একটা ফ্লাটের মালিকের কাছে আছে যে, তার ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল, আর বীমার টাকা তুলে নিয়ে গেল। যার ঘরটা বেশি পুড়ল, তার বিমাও নেই, সে কিছুই পেল না। এই সব বিষয়ে বোধ হয় সবার একটু নজর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি কথা বলব, কারো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না দয়া করে। আমাদের কাছে লোক আসেই, আমি বলেন- আর আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যই বলেন বা যেই বলেন, তারা তো এসে তদবির করেই, কিন্তু এখানে আগে আপনাদের দেখতে হবে যে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার বড় দাবি করবে, কিন্তু প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই তো আপনি তার অর্থটা দেবেন। সেটা কেন করা হয় না? তাহলে আমি কি মনে করব যে যারা তদন্ত করতে আসে, তারাও এর ভাগিদার। তাদেরও নিশ্চয়ই কিছু হাত আছে কি না, সেটাও তো আমার সন্দেহ হচ্ছে। ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বদনাম হোক, সেটা আমি চাই না। কারণ আমিও তো এই পরিবারের একজন, সেটাও তো আমার দেখতে হবে।

আরও পড়ুন  নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা-শামীম ওসমানসহ আসামি ৪৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আলফা ইনস্যুরেন্সে যোগ দিয়েছিলেন কারণ তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যেহেতু জীবন-জীবিকার জন্য কিছু করতে হবে, তখন তিনি আলফা ইনস্যুরেন্সে যোগ দেন। এই সময় আমাদের পরিবারে একটা স্বাচ্ছন্দ্য এসেছিলো, কারণ বাবা ভালো বেতন পাচ্ছেন। তখনই ধানমন্ডির বাড়িটা, আমার মা দুইটা কামরা করে আমাদের নিয়ে তোলেন।

তিনি বলেন, ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আত্মার যোগাযোগ আছে। ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজে বঙ্গবন্ধু ঢাকার বাইরে যেতেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেন। স্বাধীনতার বিষয়টাকে ধীরে ধীরে আরও সামনে নিয়ে আসার সেই সুযোগটা তিনি পেয়েছিলেন। ওই ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বসে ৬ দফা তিনি করেছিলেন। পুরো জিনিসটা টাইপ করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ (ঢাকার সাবেক মেয়র)। আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জন এবং ৬ দফা প্রণয়ন, এই ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে আমি বলব এই ইনস্যুরেন্সের একটা যোগসূত্র রয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

ট্যাগঃ