চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলন করায় গ্রেপ্তার হওয়া সৈয়দ মো. মোস্তাকিমকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-এর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মো. মোস্তাকিম এ অভিযোগ করেন। বিকাল ৫টা পর্যন্ত আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ দেননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোস্তাকিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান।
তিনি জানান, পুলিশি হেফাজতে মোস্তাকিমকে নির্যাতনের অভিযোগে ওসিসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি আদালতে শুনানি হয়েছে। ভুক্তভোগী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুনানি শেষে আবেদনটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন আদালত।মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দ মোস্তাকিম তার মাকে গত ৭ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করান। সম্প্রতি ডায়ালাইসিসের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনি এবং অন্য রোগীর স্বজনরা মিলে আন্দোলন করেন। গত ১০ জানুয়ারি তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেন। সে সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে আটক করে প্রথমে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচে মারধর করেন। পরে থানায় নিয়ে তাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের গালিগালাজ করেন।
জানা গেছে, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত জানুয়ারির শুরুর দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনে নামেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কয়েকদিন ধরে চলা ঐ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১০ জানুয়ারি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।সেদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন ও তাদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে আন্দোলনকারীরা ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন ও ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
সেসময় মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরইমধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে হাসপাতালের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান ওসি নাজিম উদ্দিন। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়।
কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ধরে এনে ভেতরে নিয়ে যান ওসি নাজিম উদ্দিন। তখন বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন অন্য পুলিশ সদস্যরা। এরপর, মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। এতে মোস্তাকিমকে অভিযুক্ত করা হয়।