শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো হয়েছে অনিচ্ছাকৃত।
তিনি বলেন, আমাদের বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে শুধুমাত্র মাধ্যমিকের ৬৫ বই নতুন করতে হয়েছে। এই ৬৫ বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি অক্ষর আমাদের দেখার সুযোগ হয়নি। আমরা অনেকেই খুব কম দেখার সুযোগ পেয়েছি। তারপরও সেখানে যদি কোনও ভুল থাকে, সেটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি কেউ এসব ইচ্ছাকৃত করে, সেটি তদন্তে কমিটি গঠন করেছি।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পাশে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাতরীর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে ভুলগুলো পাওয়া গেছে, এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে ১০ বছর আগের ভুল। আমি খুব খুশি ১০ বছর আগের বই সবাই পড়ছে। এতে ভবিষ্যতে আমাদের কোনও বইয়ে ত্রুটি থাকবে না।
তিনি বলেন, আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন; বানর থেকে মানুষ হয়েছে, কেউ কি এমন কিছু কোনও বইতে পেয়েছেন। কেউ দেখেননি। আমাদের বইতেও নেই। বইতে লেখা আছে শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছে মানুষ কি বানর থেকে এসেছে? শিক্ষক বলেছেন না। মানুষ বানর থেকে আসেনি। বানর এবং শিম্পাঞ্জি মানুষের পূর্ব পুরুষ এ কথা ঠিক নয়। এই কথাটি বইতে তিনবার বলা আছে। অথচ একটি গোষ্ঠী এটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে সৃজনশীল মানুষ হওয়া যায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা বাচ্চাদের কী শেখাতে চাই? আমরা তাদেরকে ভাষা, বিজ্ঞান, অঙ্ক শেখাতে চাই। সমাজ সম্পর্কে জানাতে চাই। সেটির সঙ্গে তারা যেন দক্ষ, যোগ্য, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হয়ে ওঠে সেজন্য তাদেরকে মূল্যবোধও শেখাতে চাই। মুখস্থ করে কিন্তু সৃজনশীল মানুষ হওয়া যায় না। বাচ্চাদের ধরে ধরে শেখাতে হবে। তাহলে সেটা আর বাচ্চারা ভুলবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে এ ধরনের শিক্ষাক্রম অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হাওর ও চরাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। এমন দুর্যোগের সময় বাচ্চারা স্কুলে যেতে না পারলে স্কুল তাদের কাছে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারির সময় আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। প্রয়োজনে নৌকা নিয়েও যেতে হবে। মূল কথা হচ্ছে আমাদের শিক্ষায় একটি রূপান্তর ঘটছে। এটাও রূপান্তরের একটি অংশ।
মন্ত্রী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী গণিত-বিজ্ঞান বিষয় ভয় পায়। অনেকে বলে বিজ্ঞান ভয়ের বিষয়। কিন্তু বিজ্ঞান মজার ও গনিত আনন্দের বিষয়। আনন্দ নিয়ে শেখা যায়। কিন্তু তা কি পদ্ধতিতে শেখালে আনন্দদায়ক হয়, সে পদ্ধতি আমাদের ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, মাইগ্রেশন বিষয়ক পরিচালক সাফী রহমান খান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম, ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান প্রফুল্ল কুমার বর্মন, ডিভিশনাল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা সমন্বয়ক প্রদীপ কুমার রায় প্রমুখ।