ফ্রান্সে নতুন পেনশন বিল বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত দুই শতাধিক বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই দিন বিক্ষোভকারীদের হাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৪১ জন পুলিশ।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সিনিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডারমানিন বলেন, গত জানুয়ারি থেকে পেনশন সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন সহিংসতা হয়েছে। শুধু প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৯০৩টি আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।
এএফপি জানায়, পুলিশের দাবি, বিক্ষোভে কিছু অ্যানার্কিস্ট গ্রুপ ঢুকে পড়েছে। তারাই বেশি সহিংসতা করেছে। তা ছাড়া মাথায় হুড ও মুখে মাস্ক পরা তরুণদেরও মারমুখো আচরণ করতে দেখা গেছে। তাদের দোকানের দরজা-জানালা ভাঙতে ও রাস্তায় কাদা ছড়িয়ে রাখতে দেখা গেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সরকারের নতুন পেনশন বিলে বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে থেমে থেমে বিক্ষোভ চলছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ফ্রান্সজুড়ে দুই শতাধিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি পুলিশ দুই শতাধিক বিক্ষোভের কথা নিশ্চিত করেছে। রাজধানী প্যারিসের মোড়ে মোড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আল জাজিরা জানায়, প্যারিসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কোথাও কোথাও রেল যোগাযোগও বিঘ্নিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্যারিসের মূল বিমানবন্দরের সবকটি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে ও ময়লা ছড়িয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে মাখোঁ সরকার নতুন পেনশন বিল উত্থাপন করে। এতে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়।
সাধারণ মানুষের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও গত সপ্তাহে তা পার্লামেন্টে পাস হয়। এ অবস্থায় ররিবার (১৯ মার্চ) অনাস্থা ভোট আনা হয় মাখোঁর বিরুদ্ধে। মাত্র ৯ ভোটে অনাস্থা ভোটে রক্ষা পায় মাখোঁ। কিন্তু অনাস্থা ভোটের পর থেকে জনরোষ আরও বেড়েছে।
এসব কিছুর পর নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন মাখোঁ। বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে মাখোঁ বলেন, এই আইন পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। এটা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। চলতি বছরের শেষের দিকে এটি কার্যকর হবে।
তবে জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবারের (সিজিটি) নেতা ফিলিপ মার্টিনেজ বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে আমাদের সাধারণ বার্তা হলো রাস্তায় লাখো মানুষ। তারা কোমর বেঁধে নেমেছে। সময় থাকতে সতর্ক হোন।
সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান ভ্যালেরি রাবাল্ট বলেন, কার্যকর করার আগে পার্লামেন্টে আইনটি নিয়ে আরেকটি চূড়ান্ত বিতর্ক হোক। আমরা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। এখন যা চলছে তা ফ্রান্সের ভাবমূর্তির জন্য বেশ ক্ষতিকর।