সারা দেশে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে লাখ লাখ গ্রাহক। আগে রিচার্জ করতে গ্রাহককে মিটারে ২০টি ডিজিট প্রবেশ করাতে হতো। এখন করাতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০টি ডিজিট। এতগুলো ডিজিট একসঙ্গে প্রবেশ করাতে গিয়ে অনেকেই ভুল করছেন।
এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বারবার ভুল করার ফলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহককে। অভিযোগকেন্দ্রে জানিয়েও সহসাই সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
কথা হয় ভুক্তভোগী কবির হোসেনের সঙ্গে। গাজীপুর সদরে তিনি বসবাস করেন। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ করতে গিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কার্ডে টাকা ভরার পর ফোনে টোকেন নম্বর আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ২০ ডিজিটের ১২টা টোকেন এসেছে। অর্থাৎ ২৪০টি সংখ্যা। আমাকে বাধ্য হয়েই সবগুলো সংখ্যা সঠিকভাবে বসিয়ে রিচার্জ কমপ্লিট করতে হয়েছে। যা চরম একটা ভোগান্তি।
একই ভোগান্তির কথা জানালেন চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করলে আসতো ২০ ডিজিট, আর এখন আসছে ১৮০ ডিজিটি! এতগুলো সংখ্যা চেপে রিচার্জ করা একটা ভোগান্তির বিষয়। বারবার ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান দিতে পারেনি। টেকনিক্যাল ইস্যুতে এমনটা হয়ে থাকে বলে জানানো হয়। অগত্যা ২০০ শব্দ চেপেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন গ্রাহকরা।
এদিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজপাডিকো) পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে প্রথমবার রিচার্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাড়তি লাইন আসবে। যা বিগত সময়েও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পর এসেছিল।
রিচার্জের বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে গ্রাহকদের ওজপাডিকোর কল সেন্টারে (১৬১৭৭) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রি-পেইড মিটার বিষয়ক নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম বলেন, যখন বিদ্যুতের ট্যারিফ বা মূল্য চেঞ্জ হয় তখন টোকেনের এই সমস্যাটা হয়। সার্ভার থেকে মিটারে তথ্য জমা দিতে গেলে এতোগুলো টোকেন আসে। এই প্রবণতা আবাসিক গ্রাহকপর্যায়েই বেশি। কারণ এই খাতে স্লাবের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, আবাসিক গ্রাহক শ্রেণির ছয়টি ধাপ আছে। (০-৫০ ইউনিট, ০-৭৫ ইউনিট, ৭৬-২০০ ইউনিট)। এই সবগুলো স্লাব বা ধাপের জন্য দশ-বারোটা টোকেন আসে। এটা একটা সফটওয়্যারগত ইস্যু। অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। অনেকে বিষয়টা বোঝেন, অনেকে বুঝতে চান না। আমরা ইতোমধ্যেই সফটওয়্যারগত এই সমস্যাটা ঠিক করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যা প্লানিং কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পল্লী বিদ্যুৎসহ অন্যান্য যেসব সংস্থা যেমন ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, বিপিডিবি ইত্যাদির প্রিপেইড মিটার রিচার্জ সিস্টেমের এসব ভোগান্তির নিরসন হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কারিগরি বিষয়ক পরিচালক নাজমুল হক বলেন, মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে টোকেনের এই সমস্যার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। নতুন মূল্যহার আসার পরে এই কারিগরি ত্রুটি দেখা গেছে। এটি আমরা আমলে নিয়েছি। তবে যেহেতু এটি বড় মাপের একটি সার্ভার, প্রচুর গ্রাহক, তাই ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে গত বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত মোট বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন ৫১ লাখ ৭ হাজার ৪৫২ জন। সে হিসাবে দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছে।
দেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৯১, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১৩ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৯, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ৬ লাখ ১৪ হাজার ২০৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯২৩ ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ৫ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ছয়টি প্রকল্প চলছে।