ঢাকা, শুক্রবার - ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিবিসি’র দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে অভিযান: ল্যাপটপ-মুঠোফোন জব্দ

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছেন ভারতের আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় দুই কার্যালয় থেকে ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালের দিকে এই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।

গণমাধ্যমের কার্যালয়ে সরকারি আয়কর কর্মকর্তাদের তল্লাশির এই ঘটনায় দেশটির বিরোধী রাজনীতিকরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। ২০০২ সালের বহুল আলোচিত গুজরাট দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি।

ওই তথ্যচিত্র প্রকাশের পর ভারতে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। চলমান এই বিতর্কের মাঝেই বিবিসির ভারতীয় দুই কার্যালয়ে অভিযান চালানো হলো। বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, তল্লাশি চালানোর পর উভয় কার্যালয় সিলগালা করে দিয়েছেন আয়কর কর্মকর্তারা।

বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার সংবাদকর্মীদের তারা জানিয়েছেন, বিবিসি’র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কর ও তথ্য স্থানান্তর মূল্যে অনিয়মের অভিযোগ আছে। এই কারণেই তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দপ্তর।

আরও পড়ুন  বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কমল লিটারে ৫ টাকা

দুই অফিসে থাকা সাংবাদিকদের ফোন ও ল্যাপটপও জব্দ করে নিয়ে গেছেন আয়কর কর্মকর্তারা। অভিযানের সময় সাংবাদিকরা যেন নিজেদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ না করেন সেই নির্দেশও দেন তারা।

আয়কর দপ্তরের তল্লাশির পর বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার সাংবাদিকদের উদ্দেশে লিখিত বার্তা দিয়েছে বিবিসি লন্ডনের মূল কার্যালয়। সেই বার্তায় সংবাদকর্মীদের সরকারের সঙ্গে ঝামেলায় না জড়াতে এবং ভীত না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বার্তায় বিবিসি বলেছে, আমরা বিবিসি ইন্ডিয়ার দিল্লি ও মুম্বাইসহ অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের কর্মীদের অনুরোধ করছি— আপনারা আতঙ্কিত হবেন না এবং সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়াবেন না। পুরো পরিস্থিতি আমরা সামাল দিচ্ছি।

ভারতের আয়কর দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে, এটি ছিল একটি রুটিন ‘নিরীক্ষা’ অভিযান নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় একজন আয়কর কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, কিছু ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। সেসব দূর করার জন্য নিরীক্ষা চালাতে আমরা এখানে এসেছি। (বিবিসির) ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আমরা খতিয়ে দেখব। এটা কোনও তল্লাশি নয়।

আরও পড়ুন  আন্দোলন-সংগ্রাম করুক, জ্বালাও পোড়াও সহ্য করা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

ভারতের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ভাষ্য, গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের জেরেই বিবিসিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

পাশাপাশি বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির জালিয়াতি ও লুটপাট নিয়ে যখন ভারতের রাজনীতি সরব- সে সময় বিবিসির কার্যালয়ে অভিযানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে বলেও মনে করে কংগ্রেস।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এনডিটিভিকে বলেন, এখানে যখন আমরা আদানি-হিন্ডেনবার্গ ঝামেলা মেটাতে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির দাবি তুলছি, তখন বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে! এটা হলো বিনাশকালে বুদ্ধিনাশের একদম যোগ্য উদাহরণ।

গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি২ টেলিভিশন চ্যানেল।  তার এক সপ্তাহ পর, ২৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় সেই তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্ব।

আরও পড়ুন  ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন মোদি

তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।

এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে দুই খণ্ডের সেই তথ্যচিত্রে।

তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতি। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সেটি প্রদর্শন করার সময় পুলিশি ধরপাকড় ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যেই তথ্যচিত্রটি ভারতের সম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি ‘মিথ্যা ও মনগড়া’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিবিসি’র বিরুদ্ধ মামলাও করেছেন ভারতের সরকারঘনিষ্ট আইনজীবীরা।

ট্যাগঃ