ভারতের রাজধানী দিল্লিতে কিডনি পাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চ। সম্প্রতি চক্রটির ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। পাচারচক্রটি বাংলাদেশ থেকে কাজ করত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন বলে জানিয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এরইমধ্যে তাকে বরখাস্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা না হলে, ভারতের গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের নামকরা চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, ওই নারী চিকিৎসকের নাম বিজয়া কুমারী। ১৫ বছর আগে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। তবে ওই হাসপাতালের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিজয়া কুমারী হাসপাতালের ‘ফি ফর সার্ভিস’ রুলে হাসপাতাল থেকে অর্থ পেতেন।
পুলিশের দাবি, ওই নারী চিকিৎসক উত্তর প্রদেশের নোইদার বেসরকারি ক্লিনিক যথার্থ হাসপাতালে ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ১৬জন রোগীর অপারেশন করেছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, তিনি হাসপাতালের কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, পাচার চক্রটি পরিচালনা করা হয় রাজস্থান ও বাংলাদেশ থেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে রাজস্থান পুলিশও।
এবিষয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমিত গোয়েল জানান, দিল্লির সরিতা বিহার হাসপাতালে কাজ করতেন ওই নারী। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা এক চিকিৎসকও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী ভারতে কিডনির চিকিৎসা করান। এজন্য প্রচুর টাকাও খরচ হয়। যাদের শরীর থেকে কিডনি নেওয়া হচ্ছে তাদেরকে টাকা ছাড়াও চাকরির অফারও দেওয়া হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে রোগীকে জোর করে বা ভয় দেখিয়েও কিডনি নেওয়া হয়ে থাকে। মূলত বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল ভিসার মাধ্যমে তাদের ভারতে নিয়ে আসা হয়। ভারতে নেওয়ার পর তাদের রাখা হয় দিল্লির আশেপাশের গ্রামগুলোর ফ্ল্যাটে। যারা কিডনি পেতেন তাদের দিতে হতো নূন্যতম ৩০ লাখ রুপি। এক্ষেত্রে ডোনার পেতেন মাত্র পাঁচ লাখ। আর চিকিৎসক বিজয়া পেতেন তিন লাখ রুপি।
দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চের দাবি, ডোনার হিসেবে যাদের কিডনি নেওয়া হত, তাদের কখনোই জানানো হতো না তাদের কিডনি নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের কিডনি রোগী জানিয়ে তাদের বলা হতো কিডনি পরীক্ষা করতে তাদের নেফ্রন নেওয়া হবে। ফলে না বুঝেই চিকিৎসক বিজয়ার ফাঁদে পা দিতেন তারা।
অন্যদিকে নয়দার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বিগত তিন মাসে মাত্র একটি অপারেশন করেছিলেন বিজয়া। পরিচিত দাবি করে সেই রোগীকে হাসপাতালে তিনি নিজেই নিয়ে আসেন। হাসপাতালে কোন রোগীকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়নি কখনোই। এদিকে এই নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর তাকে আজীবন হাসপাতালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।