ঢাকা, সোমবার - ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভিডিও ফুটেজেও মিলেছে যৌন নিপীড়নের সত্যতা

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে চালক ও তার সহযোগীরা মিলে যৌন হয়রানির ঘটনায় ওই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তা অনন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবে। ওই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর, জনদুর্ভোগ এসব এড়িয়ে কিভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে দাবি আদায় করা যায় তার সার্থক উদাহরণ তৈরি করল। শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয় পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদের ফলে ওই চালক ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়েছে।

গত শনিবার দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে ১টা ১৩ মিনিট। বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ পরিবহনের বাসটিতে ওঠেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থী। দুপুর ১টা ১৩ মিনিটে ওই শিক্ষার্থী বাসটি থেকে নামেন যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীতে। এই ২০ মিনিটের মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি। এই দূরত্বের মধ্যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে তুরাগ বাসের চালক রোমান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর এই বখাটেদের শনাক্ত করেন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা বখাটেদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আন্দোলনকারীরাও তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস ওঁঝা সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ঢাকার মহানগর হাকিম গোলাম নবী গতকাল প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিনজন হলো তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের চালক রোমান, তার সহযোগী নয়ন ও মনির। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুন  চট্টগ্রামে বাসাবাড়িতে স্বাভাবিক হয়েছে গ্যাস সরবরাহ

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। ঘটনার পর আমরা বাড্ডা লিংক রোড থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করি। এরপর ওই ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত তুরাগ পরিবহনের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করি।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত শেষে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ২১ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ১৩ মিনিটের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটেছে।’

এদিকে আলোচিত এ ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও নানা তথ্য পাওয়া গেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নে জড়িত বখাটেরা ধরা পড়ায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে তারা। গণপরিবহনে তারা আর এ ধরনের ঘটনা দেখতে চায় না। শুধু শিক্ষার্থী নয়, বাসযাত্রী কোনো নারীকেই অসম্মান করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছে। আবারও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন শুধু চালক আর সহযোগী নয়, বাস মালিক সমিতির বিরুদ্ধেও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আরও পড়ুন  প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে কলাগাছের আঁশ থেকে তৈরি 'কলাবতী শাড়ি'

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় তুরাগ পরিবহনের বাসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় প্রতিবাদকারী ছাত্রপরিষদের সমন্বয়ক পারভেজ হোসেন। গতকাল তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন আমরা গ্রেপ্তার হওয়া তুরাগ বাসের চালক, সহযোগীসহ তিন বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অপেক্ষায় আছি। সেই সঙ্গে এ ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নাভিদ কামাল শৈবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাসচালকসহ তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করায় সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

বখাটে বাসচালক ও তার সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ায় আন্দোলনকারী উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আনন্দ উদ্যাপন করে।

এই আন্দোলনের সমন্বয়ক পারভেজ হোসেন বলেন, ‘উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে কিভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনে দাবি আদায় করা যায়। আমরা কাউকে আঘাত করিনি। গাড়ি ভাঙচুর করিনি। আমাদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। আমরা কাউকে নাজেহাল করেনি। বাসে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে এ ধরনের সফল কর্মসূচির কারণেই চালক ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়েছে।’

আরও পড়ুন  মাদারীপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

তিনি আরো বলেন, ‘আপাতত আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছি। বিচারে অপরাধীদের কী শাস্তি হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি। অপরাধীদের যদি শাস্তি না হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, তারা বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। তাঁরা বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার হিসেবে কাকে নিয়োগ দেন, তাদের চরিত্র ভালো না খারাপ সেটা যাচাই করেন কি না, তারা মাদকাসক্ত কি না, তারা ভবিষ্যতে যাত্রীদের ভালো সেবা দেবে কি না, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে কি না—এমন অন্তত ২০টি বিষয় বাস মালিক সমিতির কাছে লিখিত দিয়ে তা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে।

যৌন হয়রানির প্রতিবাদে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকে রেখে প্রতিবাদ করে। অভিযুক্ত বাসচালক ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। তবে এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় সায়েদাবাদ থেকে আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ায় রাতেই বাসগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

ট্যাগঃ

আলোচিত সংবাদ