মালয়েশিয়ায় আবারও বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন দেশটিতে অবস্থান করা অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকরা।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে নতুন করে শুরু হওয়া লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ বলে মনে করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে নতুন কর্মীরা প্রবেশ করছেন। পাশাপাশি দেশটিতে আনডকুমেন্টেড অবস্থায় রয়েছেন এমন কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটা দারুণ খবর।
তবে লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় এবার ঠিক কত বাংলাদেশি বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন সে সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে জানান ইমরান আহমদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, এক দিন আগেই এই প্রোগ্রাম ফের চালুর কথা জানিয়েছে দেশটির নতুন সরকার। কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের রেকর্ড নেই এমন কর্মীদের বৈধ করা হবে।
হাইকমিশনার বলেন, তবে কোন কোন খাত এবং কোন দেশের কর্মীরা এর আওতায় আসবেন সে বিষয়ে আমরা এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সেটি নির্ধারণ করে। আমরা বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।
এই প্রোগ্রামের ঘোষণায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বলেছেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে কর্মরত অবৈধ শ্রমিকদের যাতে তাদের মালিকেরা বৈধভাবে নিয়োগ দিতে পারেন সেটাই এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য। বিদেশি কর্মী আনার জন্য বিভিন্ন দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে অর্থ দেয়ার চেয়ে এ দেশে থাকা অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নিয়োগ দেয়ার খরচ কম।
এই প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ফি ধরা হয়েছে ১৫০০ রিঙ্গিত, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। তার সঙ্গে মেডিকেল ও অন্যান্য ফি মিলিয়ে মোট খরচ হয় তিন হাজার রিঙ্গিতের ওপর।
গত বছর এই কর্মসূচির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ৭০০ মিলিয়নের বেশি রাজস্ব আয় রেকর্ড করেছে বলে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন তার নির্দিষ্ট কোনও হিসাব নেই। তবে দূতাবাসের একটি সূত্র বলছে, এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখের মতো হতে পারে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ ধাপে এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করেন বলে মালয়েশিয়ার সরকার জানায়।
যে প্রক্রিয়ায় বৈধ করা হবে কর্মীদের-
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কালো তালিকাভুক্ত অর্থাৎ যার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ রয়েছে এমন শ্রমিক এবং অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এমন অভিবাসী ছাড়া যে-কেউ এই লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।
উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান এবং গৃহকর্মী- এই যে আটটি খাতে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধভাবে নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এসব কাজের জন্য ১৫টি ‘সোর্স কান্ট্রির’ কথা উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়া, যার অন্যতম বাংলাদেশ।
এ কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়াতে কাজ করছেন কিন্তু সঠিক কাগজপত্র নেই এমন বিদেশি কর্মীরা অর্থের বিনিময়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন অথবা দেশে ফেরত যেতে পারবেন। মূলত নিয়োগকর্তারা ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০’-এর মাধ্যমে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু করেছেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে মাত্র এক দিন সময় লাগবে। তারপর হবে বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যা পরিচালনা করবে ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিকেল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সি। পরবর্তী প্রক্রিয়া হবে- রিক্যালিব্রেশন ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস (পিএলকেস), প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং শুল্ক প্রদান। যখন সব নথি সম্পূর্ণ হয়, নিয়োগকর্তারা পিএলকেস বা কাজের অনুমতিপত্র ইস্যু করেন।