ঢাকা, রবিবার - ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মোদীকে নিয়ে করা বিবিসি’র প্রামাণ্যচিত্র নিষিদ্ধ করেছে ভারত

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রধান নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে করা বিবিসির প্রামাণ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। ২০ বছর আগে গুজরাটে হওয়া ভয়াবহ দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া: দি মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছে বিবিসি।

তবে প্রামাণ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করার ফলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর প্রচন্ড আক্রমণ হিসেবে দেশে ও বিদেশে তিনি এবং তার সরকার সমালোচিত হচ্ছেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করে জরুরী অবস্থার ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে ও সরকারের তথ্য এবং প্রযুক্তি আইনগত যথেষ্ট ক্ষমতাগুলোর একটি প্রদর্শিত হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, বিবিসি ওয়ার্ল্ডের ভিডিওগুলো শেয়ার করে তারা যুদ্ধপ্রিয় ও শত্রুভাবাপন্ন প্রপাগান্ডা করেছেন ও ভারতবিরোধী আবর্জনাটি তৈরি করেছেন, যেগুলোকে তারা সাজিয়েছেন প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে। দেশের সাবভৈমত্বের আইনগুলো ও নীতিমালা অনুসারে ইউটিউব ও টুইটারে শেয়ার লিংকগুলোতে প্রচারিত বিবিসির প্রামাণ্যচিত্রটিও ভারতের অধীনে নিষিদ্ধ।

তিনি জানিয়েছেন, তার দেশের আইন অনুসারে নিয়মটি প্রতিপালিত হবে।

সিএনএন এই বিষয়ে টুইটার ও ইউটিউবের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য সংগ্রহ করতে পারেনি।

এই প্রামাণ্যচিত্রের নেপথ্য নায়ক ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০০২ সালে তার জন্মস্থান গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই তার শীর্ষ ক্ষমতায় যাত্রা। সেই ২০০২ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও সংখ্যালঘিষ্ট প্রধান জনগোষ্ঠী মুসলিমরা মুখোমুখি রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের ভয়াবহ সংঘাতে একটি ট্রেনে বোমা হামলা হয়েছে ও কয়েক ডজন হিন্দু মারা গিয়েছেন। এই হামলার জন্য তারা মুসলিমদের দায়ী করেছেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো (প্রধানত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও শিবসেনা এবং বিজেপি) মুসলিমদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জানমালের ওপর রক্তের লেলুপতায় হামলে পড়েছেন। ১ হাজারের বেশি মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই মুসলমান। তবে কত মুসলিম নারীর ইজ্জতহানি হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। কত মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে তথ্যও চিরকালের জন্য চাপা পড়েছে।

আরও পড়ুন  বিএনপির সমাবেশে পুলিশ কনস্টেবল নিহত

দুঁদে রাজনীতিবিদ ও হিন্দু ধর্মীয় রাজনীতির সিংহপুরুষ নরেন্দ্র মোদী ভারতের ক্ষমতার সিংহাসন প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন ২০১৪ সালে। অভিযোগ আছে, বরাবরের মতো বিজেপির তুরুপের তাস ও কার্যক্ষেত্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও চরম হিন্দুবাদকে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দিয়ে তিনি ও তার দল ক্ষমতায় এসেছে।

ভারতের ১০৩ কোটি মানুষের ৮০ ভাগই হিন্দু। আরও অভিযোগ আছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে দাঙ্গা ও সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং রক্তের হোলি খেলাকে দমানো ও থামানোর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তবে তিনি বরাবরই তা অস্বীকার করে এসেছেন তিনি। তারপরও কালেক্রমে তার বিপক্ষে সরকারি ভাবে অন্যদের সহযোগিতায় আইনী কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন  তারেক-জোবায়দাকে ফিরিয়ে আনতে 'যা যা করার' করব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২০১২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোট নরেন্দ্র মোদী ও তার গুজরাট সরকারের বিপক্ষে একটি বিশেষ ও উচ্চ পর্যায়ের সরকারী তদন্ত দল প্রেরণ করেছে। তবে তারা ফিরে এসে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন যে, মোদীকে দোষারোপ করার মতো কোনো তথ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও তাকে নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনার শেষ নেই।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বিবিসির প্রামাণ্য চিত্রটিকে একটি প্রপাগান্ডা উল্লেখ করে বলেছেন, এটি সাজানো হয়েছে একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে নিন্দিত করার উদ্দেশ্যে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে আলাপকালে আরও বলেছেন, এর পেছনের এজেন্ডা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে এবং এমন প্রচেষ্টাগুলোকে খোলাখুলিভাবে আমরা মর্যাদাদান করতে ইচ্ছুক নই। এই মন্তব্যে সাড়া দিয়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল, অক্ষরে, অক্ষরে গবেষণার মাধ্যমে সর্বোচ্চ এডিটোরিয়াল মানদন্ডে সেরা উপায়ে নির্মিত। তাদের এই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, বিবিসি যোগাযোগের পর ভারত সরকার উত্তরদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এবিষয়ে সিএনএন তাদের মন্তব্য জানতে চাইলে বিবিসি এখনো সাড়া দেয়নি।

আরও পড়ুন  বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত: ডোনাল্ড ট্রাম্প

তবে এই বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র আর. পি. সিং বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রামাণ্যচিত্রটিকে নিষিদ্ধ করায় খুশি হয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোকে সামনে রেখে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির ভাবমূর্তিকে কলংকিত করার একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

তবে তার বিরোধী কংগ্রেসের অন্যতম বিধানসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্রী বলেছেন, এই সরকার অগ্রহণযোগ্য প্রচণ্ড সেন্সর হামলা চালাচ্ছে। বিবিসি কী দেখালো তার প্রমাণ বা অপ্রমাণের দায় ও ভার যারা দেখেছেন তাদের ওপর বর্তায়।

বিবিসির কাছে থাকা ভারতের সাবেক উপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশ সরকারের একটি অপ্রকাশিত রিপোটও বিবিসি তাতে সম্প্রচার করেছে এবং এই সরকারী সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, একটি কূটনৈতিক তার হিসেবে তারা প্রচার করেছেন। সেখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মুসলিম নারীদের ধর্ষণের প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তখন ২০০২ সালে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্র বলেছেন বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে ফিচারগুলোর বিভাগে, মোদী পুলিশকে পাঠানোর উল্টো পন্থা অবলম্বন করেছেন ও শান্তভাবে হিন্দু চরমপন্থীদের উৎসাহিত করেছেন।

বিবিসির ভারত ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর করা এই প্রামাণ্যচিত্র সিরিজের প্রথমটি ১৭ জানুয়ারি তারা সম্প্রচার করেছেন। গতকাল ২৪ জানুয়ারি ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় অংশ সম্প্রচারের কথা ছিল। তবে ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ায় সেই পথে আর যায়নি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস।

ট্যাগঃ

আলোচিত সংবাদ

এ বিভাগের আরও

সর্বশেষ