পুলিশের বিরুদ্ধে থানা হাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন কিডনি রোগী মায়ের ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া কলেজছাত্র মো. মোস্তাকিম (২২)। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবির আন্দোলন থেকে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন মোস্তাকিম। এর আগে রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
পুলিশ কেন এভাবে পিটিয়ে জখম করলো বুঝতে পারছি না উল্লেখ করে মোস্তাকিম বলেন, আমি তো পুলিশকে কিছু বলিনি। কোনোদিন তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের বিতর্কে জড়াইনি। আমি শুধুমাত্র মায়ের ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। তাই বলে এভাবে আমাকে নির্যাতন করবে পুলিশ। এটি পুলিশের কেমন আচরণ।
আমার অপরাধ কী, কেন আমাকে নির্যাতন করে কারাগারে পাঠানো হলো প্রশ্ন রেখে মোস্তাকিম বলেন, আমার পুরো শরীরে পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি আইনজীবীদের দেখেছি। আপনাদেরও দেখাচ্ছি- বলেই নিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানের জখম দেখান মোস্তাকিম।তিনি বলেন, আমার ওপর নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিনা কারণে আমাকে নির্যাতনের বিচার চাই। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
এদিকে, মোস্তাকিমকে গ্রেফতার ও ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার। ১৪ জানুয়ারি এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সোমবার বিষয়টি জানানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রানি প্রামাণিক বলেন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মাহতাব উদ্দীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আলী হোসেন ও অতিরিক্ত একজন উপ-পুলিশ কমিশনার। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
১ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ডায়ালাইসিসের ফি। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণকারী রোগী ও তাদের স্বজনরা। আন্দোলন থেকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) গ্রেফতার হন মোস্তাকিম। তিনি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদ অক্সিজেন এলাকার মৃত খালেদ আজমের ছেলে। চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল শেষ বর্ষে পড়ার পাশাপাশি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স করছেন মোস্তাকিম। পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়। চার দিন পর রবিবার কারাগারমুক্ত হন।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন অবৈধ জানিয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ এভাবে নির্যাতন করতে পারে না। মোস্তাকিম কোনও দাগী আসামি কিংবা সন্ত্রাসী নন। মায়ের ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন করতে যাওয়ায় তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তার সঙ্গে পুলিশ কেন এমন নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানাই। তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে ওই মামলার বাদী, সাক্ষী সবই পুলিশ। পাঁচলাইশ থানায় এই মামলা থাকলে মোস্তাকিমসহ অজ্ঞাত আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে না। কেননা পাঁচলাইশ থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এজন্য র্যাব, পিবিআই, সিআইডি কিংবা অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে মামলার তদন্ত করা প্রয়োজন।
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এরকম কোনো ঘটনা থানায় ঘটেনি। তিনি আদালতে কিছু বলেননি। জামিন পেয়ে অনুশোচনা থেকে মাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি তার মাকে সামান্য সহযোগিতা করেছি, যেহেতু তিনি ডায়ালাইসিস রোগী। তখনো তারা কিছু বলেননি। এখন কেন এসব অভিযোগ করছে বুঝতে পারছি না।