বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে সরকার এবং দলের ভিতরে বাইরে চলছে নানা আলোচনা। আলোচিত হচ্ছে হ্যাভিওয়েটদের কয়েকজনের নাম।
কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা- সেই নাম নিয়েও বিভিন্ন মহলে ব্যাপক কথাবার্তা হচ্ছে। ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর তিনি ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধান অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালণ করতে পারবে না। সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ বলছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৫০(৩) অনুচ্ছেদ বলছে, একাধিক হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
রেওয়াজ অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দল আস্থাভাজনদের মধ্য থেকে কাউকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হয়। যেহেতু জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আওয়ামী লীগের, ফলে ক্ষমতাসীন দলই রাষ্ট্রপতি হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে। যদিও শেষ সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনা।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া ও বিশ্বস্ত কাউকে বেছে নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ। এমনটাই ভাবছে দল থেকে শুরু করে দেশের নানান শ্রেণি পেশার মানুষ।
রাজনীতির অন্দরমহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে শীর্ষে আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুসারে, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেবে এমন কোনো তৎপরতা বা আলোচনা নেই। ফলে, একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা যাচাই–বাছাইয়ের পরই আসলে নিশ্চিত হয়ে যাবে, কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা। তখন ভোটের আর প্রয়োজন পড়বে না।
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের ভেতর কয়েক মাস ধরে ডজনের বেশি ব্যক্তির নাম আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে শীর্ষে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, মসিউর রহমান, শিরীন শারমিন চৌধুরী, আনিসুল হক ও বিচারপতি খায়রুল হকের নাম।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, নানা বিচার–বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালিকা ছোট করে নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং শিরীন শারমিন চৌধুরী সর্বোচ্চ বিবেচনায় আছেন।
তবে দলীয় সভাপতির ঘনিষ্ঠ মহলে সক্রিয় কোনো রাজনীতিককে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক নম্বর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে বিবেচনায় রাখছেন দলের নীতিনির্ধারকদের অনেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে, যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন, তিনিই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন এটা নিশ্চিত বলা যায়।