ঢাকা, সোমবার - ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাষ্ট্রপতি পদে চমক দেখালেন প্রধানমন্ত্রী

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কারও অনুমান সেই অর্থে কাজে লাগেনি। কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি পদ অলংকৃত করতে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতারাও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধারণা করতে পারেননি। এমনকি গণমাধ্যমের খবর বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানামুখী আলোচনায় মো. সাহাবুদ্দিনের নাম ছিল না।

রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়নে প্রধানমন্ত্রী চমক দেবেন, এমন আলোচনা বরাবরই ছিল। তবে এর পাশাপাশি এক ডজনের বেশি প্রার্থীর নাম ছিল মুখে মুখে, যাদের মধ্যে সাবেক আমলা, শিক্ষক ও কয়েকজন মন্ত্রী ছিলেন। গত কয়েক দিনে নামের সংখ্যা নেমে আসে তিন থেকে চারটিতে। এমনকি একজন প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে মর্মে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু কোনো আলোচনায় ছিল না দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনের নাম।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে দুর্নীতি-ষড়যন্ত্রের অভিযোগ যখন তোলে, তখন দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সাহাবুদ্দিন। সরকার বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দুদককে তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকের একটি অভিজ্ঞ দল দুদককে সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগের অনুসন্ধান তদারক করে। এ সময় তদারকির নামে দুদকের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠে। সাহাবুদ্দিনের বলিষ্ঠ ভূমিকা সেই অপচেষ্টা রুখতে সহায়তা করে। দুদকের সাবেক এই কমিশনারের নাম ঘোষণার পর অনেকেই চমকে গেছেন।

আরও পড়ুন  ভিসানীতিতে যুক্ত হবে গণমাধ্যমও: পিটার হাস

অবশ্য এই পদে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। তারও আগে থেকে তৃণমূল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সঙ্গী তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওই দিন সকালে প্রতিরোধ মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে ২০ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হন। সেনাক্যাম্পে তিন মাস ধরে চলে শারীরিক নির্যাতন। তিন বছর কারাগারে আটক থাকার পর অর্ধপঙ্গু অবস্থায় ১৯৭৮ সালে মুক্তি পান তিনি।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। তখন পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৭৪-৭৫ সালে ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হলে সেখানে পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে মনোনয়ন পান।

আরও পড়ুন  সরকারের পদত্যাগে এক দফা দাবি ঘোষণা

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগদান করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিচারক হিসেবে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন পাবনার এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ২০০৬ সালে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে অবসর গ্রহণের সময় হওয়ার ১৫ বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

২০১১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার পদে নিয়োগ করা হয় তাকে। ২০১৬ সালের মার্চে এই পদ থেকেও অবসরে যান তিনি।

সাহাবুদ্দিন বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান। আইন বিষয়ে দক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের জানান, সংসদীয় দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি আশা করি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিরপেক্ষ এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আরও পড়ুন  লণ্ডভণ্ড সেন্টমার্টিন, নিহত ২

পাবনার সন্তান মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনা জেলার সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর মো. সাহাবুদ্দিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। ড. রেবেকা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান রনি দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত।

ট্যাগঃ

এ বিভাগের আরও

সর্বশেষ