ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদন্ড ও লোকসভার সদস্যপদ বাতিলসহ পুরো বিষয়টির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সোমবার এ মন্তব্য করেছেন।
সোমবার (২৭ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করে। আর আপনারা তো জানেন, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যে কোনো ধরেনের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। তাই আমরা ভারতে রাহুলের মামলাসহ পুরো বিষয়টি নজরে রাখছি।
রাহুলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ভারত বা কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্যাটেল বলেন, না এ রকম সুনির্দিষ্ট কোনো যোগাযোগের খবর আমার কাছে আপাতত নেই। তবে যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে এ ধরনের যোগাযোগটা খুব একটা সাধারণ ঘটনা।
এদিকে রাহুলকে সরকারি বাংলো ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে তাকে দিল্লির লোকসভা এমপিদের তুঘলক লেনের বাংলো ছাড়তে হবে।
সোমবার (২৭ মার্চ) ভারতের লোকসভা হাউসিং প্যানেল তাকে ওই নোটিশ দেয়।
এনডিটিভি জানায়, ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার এমপি হিসেবে ২০০৫ সাল থেকে তুঘলক লেনের ১২ নম্বর বাংলোয় থাকছেন রাহুল। এমপি হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তা ভোগ করেন তিনি।
২৪ মার্চ রাহুলের এমপি পদ বাতিল করে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তার আগের দিন ২৩ মার্চ গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
এরআগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এক জনসভায় রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেন, আমি জানি না কেন সব চোরের নাম মোদি হয়? নীরব মোদি, ললিত মোদি বা নরেন্দ্র মোদির নাম খেয়াল করলেই বিষয়টি আপনারা আঁচ করতে পারবেন।
রাহুলের উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে নীরব মোদি একজন পলাতক ব্যবসায়ী। পাঞ্জাবের জাতীয় ব্যাংক থেকে অন্যায্যভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর ললিত মোদি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সাবেক প্রধান। বিশেষ অভিযোগে তাকে ভারতের ক্রিকেট পরিচালনা পরিষদ থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর ওই মন্তব্যের পর বিজেপির আইনপ্রণেতা পূর্ণেশ মোদি একটি মানহানি মামলা করেন। সেই মামলার ভিত্তিতে ২৩ মার্চ সুরাটের আদালত রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
তবে ওই মামলায় রাহুলের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং তার গ্রেপ্তার ৩০ দিন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে রাহুল গান্ধী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট সুরাট আদালতের রায় বাতিল করে দিলে রাহুল গান্ধী লোকসভার সদস্যপদ ফিরে পাবেন।
অন্যদিকে রায় বহাল থাকলে মামলা অব্যাহতভাবে চলবে। কিন্তু চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত পার্লামেন্টে অংশে নিতে পারবেন না রাহুল। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, কোনো এমপির কারাদণ্ড হলে দণ্ড ঘোষণার দিন থেকে সাজা শেষ হওয়ার পরবর্তী ছয় বছর তিনি পার্লামেন্টে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
এদিকে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার এমপি পদ বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ১৭টি দল বিক্ষোভ করেছে। সোমবারের বিক্ষোভে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (আপ), ভারত রাষ্ট্র সমিতি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো দলের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন।
বিক্ষোভের আগে বিরোধী ১৭ দলের প্রতিনিধিরা লোকসভার বিরোধী নেতাদের চেম্বারে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে বিরোধী দলের নেতারা সংসদ এলাকার গান্ধীর ভাস্কর্যের কাছে জড়ো হন। এরপর তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। এতে রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধীও যোগ দেন। বিরোধী নেতাদের অনেকে কালো জামা পরেন এবং মুখ কলো কাপড়ে ঢেকে রাখেন।
বিরোধীদের দাবি, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত। রাহুলের জনপ্রিয়তা কমাতে এবং বিরোধীদের ভয় দেখাতে তার এমপি পদ বাতিল করা হয়েছে।
স্ক্রলডটইন জানায়, আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদি শব্দ নিয়ে মজা করলেই সব মোদিকে অপমান করা হয় না। তাই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ধোপে টিকবে না।
সূত্র- এনডিটিভি