বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপে নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব তিনি এ কথা জানান।
গত বৃহস্পতিবার ইসির পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ওই চিঠি দেয়া হয়। চার দিন পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনাদের উদ্দেশে দুটো কথা বলবো। আমাদের এখান থেকে আমরা অনানুষ্ঠানিক পত্রে বিএনপি মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আনুষ্ঠানিক নয়। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, এমন একটি চিঠি দিয়েছিলাম গত বৃহস্পতিবার শেষ বেলায়। (তাদের) বিভিন্ন বক্তব্য থেকে মনে হয় চিঠিটা ওনারা পেয়েছেন। আমি ধরেই নিয়েছি ওনারা চিঠিটা পেয়েছেন।
বিএনপিকে সংলাপে ডাকা হয়নি জানিয়ে সিইসি বলেন, সংলাপ বিষয়টা কিন্তু আনুষ্ঠানিক। আমরা তাদের সুস্পষ্টভাবে বলেছি আনুষ্ঠানিক না হলেও অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আসতে পারেন। আমরা এই আমন্ত্রণ-আহ্বান অত্যন্ত বিনীতভাবে জানিয়েছি। এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সত্য-মিথ্যা জানলাম।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বলা হয়েছে, বা অনেকে বলতে চেয়েছেন এটা সরকারের একটা কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যমে পুরো জাতিকে অবহিত বা আশ্বস্ত করতে চাই। এই চিঠির সঙ্গে সরকারের কোনো রকম কৌশল নেই বা ছিল না। যদি কেউ এটাকে কূটকৌশল মনে করতে চান, তবে এটি নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে, সরকারের কূটকৌশল নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনোই কূটকৌশল হিসেবে এই কাজটি করেনি। নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকে, সেটা যেন নিরসন হয়, সেজন্য বলছি চিঠিটি আমাদের এখান থেকে গেছে, সরকারের ওখান থেকে নয়। আর এমনটা মনে করায় আমরা অনেক সময় ব্যথিত হই যে, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে আমরা কোনো কাজ করব। আমরা সরকারের আজ্ঞাবহন করিনি। একটা কমিশন, পাঁচজন কমিশনার আমরা এখানে আছি। নির্বাচন বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আলোচনা করছি। আমাদের চিন্তায় এটি ফুটে উঠেছে যে, বিএনপির মতো একটি দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। আমরা বলেছি যে, আপনাদের যে কৌশল সে কৌশলের ওপর আমাদের কোনো মন্তব্য থাকবে না। তারপরও আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আলোচনার ফল ইতবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু প্রয়াস গ্রহণ করতে তো কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।
বিএনপির কাছ থেকে ইসি ফিরতি কোনো চিঠি পায়নি জানিয়ে সিইসি বলেন, যেহেতু চিঠি দিয়েছি, যে কোনো জবাব আমাকে চিঠির মাধ্যমেই পেতে হবে। গণমাধ্যমে (বিএনপি নেতারা) যেটা বলেছেন, অনেকের বক্তব্যই শুনেছি। যেহেতু আমি (বিএনপির) মহাসচিব মহোদয়কে অত্যন্ত বিনীতভাবে একটি চিঠি দিয়েছি, তাই তাদের যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে যদি চিঠির মাধ্যমে আসে সেটা কাঙ্ক্ষিত এবং তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এখন আগাম কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।
আলোচনা কী নিয়ে হবে, তাদের দাবি তো একটাই নির্বাচনকালীন সরকার- এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে চাচ্ছি না। কথা হচ্ছে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা যদি আসে, কী আলোচনা করবো সেটা সময়ই বলে দেবে।
তারা যদি কোনো এজেন্ডা দিয়ে দেন, যেমন মির্জা ফখরুল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে আসছেন, সেক্ষেত্রে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেটা ওনারা যদি এজেন্ডা ঠিক করে দেন, তখন আমরা ঠিক করব, কমিশন সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
চিঠির বিষয়টি পুরো ইসিই জানতো উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সবাই চিঠি অক্ষরে অক্ষরে পাঠ করেছেন। আমাদের কোনো সদস্য কিছু সংশোধনীও দিয়েছেন। সেটাও সবাই দেখেছেন। কাজেই এটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পত্র নয়। এটা সিইসি লিখেছেন, কমিশনের পক্ষ থেকে।
কোনো চাপ থেকে এই চিঠি দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, চাপ যেটা বলেছেন এটা একেবারেই একটা অমূলক ধারণা। এটা শুধু আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভূত। এই কতক্ষণ পরপর আমাদের চাপ দেবে, আমরা দেবে যাব, চাপ দেবে আমরা দেবে যাব; এটা হওয়ার কথা নয়।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ করে দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই হচ্ছে মুখ্য।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদেরও লক্ষ্য দলগুলো চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র আরও সমৃদ্ধ হোক, আরও সংহত হোক। সেটা আমাদের প্রথমদিন থেকে সদিচ্ছা। সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন আমরা সব সময় ঘটানোর চেষ্টা করেছি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ডাকে বিএনপি সাড়া দেবে কি না তা জানা যাবে মঙ্গলবার। ইসির দেয়া চিঠির জবাবে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নির্ধারণ করতে স্থায়ী কমিটির সভা ডেকেছে বিএনপি। রাত ৮টায় হবে ওই সভা। এরপর তাদের অবস্থান জানা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।