ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই আলোচিত মুখ নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধী। একজন ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা, আরেকজন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা। তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই দুজনের ওপর সবার আলাদা নজর ছিল।
তবে নির্বাচন শেষ হলেও ভারতীয় রাজনীতির এই দিকপালদের নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। আর হবেই বা কেন, ইতিমধ্যে তৃতীয়বারের মতো দেশের সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন মোদি। অন্যদিকে সংসদে বিরোধী নেতার আসনে রাহুলকে দেখার দাবিও জোড়েসোড়ে উচ্চারিত হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে‘র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা (এমপি) আজ শুক্রবার বৈঠকে বসবেন। তাদের এই বৈঠক থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হবে। এরপর শুক্রবার বিকেলেই ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাবেন এনডিএ নেতারা।
শুক্রবার (৭ জুন) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ভারতীয় সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ এমপিদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে মোদি জোটের নেতা নির্বাচত হলে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ আরও প্রশস্ত হবে। আগামী রবিবার (৯ জুন) তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করতে পারেন।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস‘র খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রায় সেঞ্চুরি করে চমক দেখিয়েছে কংগ্রেস। তারা নির্বাচনে ৯৯টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেসের এই সাফল্যের কৃতিত্ব রাহুলকে দেয়া হয়। এ ছাড়া কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোটও নির্বাচনে ২৩২টি আসনে জিতে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। ফলে ভারতীয় সংসদে রাহুল যেন বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেন, সে দাবি বেশ জোরদার হচ্ছে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস ও জোটের অনেক নেতা এই দাবি তুলেছেন।
কংগ্রেসের এমপি মানিকম ঠাকুর এক্স-এ একটি পোস্টে রাহুলকে বিরোধী নেতার আসন গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, আমি আমার নেতা রাহুল গান্ধীর নামে ভোট চেয়েছিলাম। আমি মনে করি লোকসভায় তার কংগ্রেসের নেতা হওয়া উচিত। আমি আশা করি নির্বাচিত কংগ্রেস এমপিরাও একই চিন্তা-ভাবনা করছেন। তবে দেখা যাক কংগ্রেসের সংসদীয় দল কী সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার এমপি বিবেক টাঙ্কাও একই দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, রাহুল জি নির্বাচনী প্রচারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই আমাদের নির্বাচনী মুখ ছিলেন। লোকসভায় সংসদীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করা তার কর্তব্য।
কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদাম্বরম বলেছেন, আমি মনে করি এই পদটা কংগ্রেসের ভাগে আসবে। আমার ব্যক্তিগত মত, রাহুল গান্ধীকে অবশ্যই কংগ্রেসের তরফে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব নিতে হবে।
শুধু কংগ্রেস নেতারা নয়, এমনকি শিবসেনার (ইউবিটি) এমপি সঞ্জয় রাউত গান্ধীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী যদি নেতৃত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত হন, তাহলে আমরা আপত্তি করব কেন? তিনি একাধিকবার নিজেকে জাতীয় নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় নেতাদের একজন। আমরা সবাই তাকে চাই এবং তাকে ভালোবাসি। জোটের কোনো আপত্তি বা মথপার্থক্য নেই।
২০০৪ সালে রাজনীতিতে নাম লেখান রাহুল গান্ধী। তবে ৫৩ বছর বয়সী এই কংগ্রেস নেতা এখন পর্যন্ত কোনো সাংবিধানিক পদে বসেননি। যদিও এই সময়ের মধ্যে তার দল কংগ্রেস দেশের ক্ষমতায় পর্যন্ত ছিল।