জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় বরখাস্তকৃত পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিম ওরফে সাইফ আমিন পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। জরিমানা অনাদায়ে তাকে ১৮ মাসের কারাভোগ করতে হবে।
সোমবার (২৭ মার্চ) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। তবে জরিমানার টাকা জমা দিলে আসামির কারাভোগ করতে হবে না বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পৃথক দুই ধারায় এ রায় ঘোষণা করেন আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে ৯ মাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া একই আইনের ২৯ (২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিন লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে ৯ মাসের কারাভোগ করতে হবে। দুই ধারার সাজা পৃথকভাবে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর আইনজীবী মোহাম্মদ হায়দার তানভীরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বরখাস্তকৃত পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিম ওরফে সাইফ আমিন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ক্লাবে জুয়ার আসর থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয় করেন- ফেসবুকে এমন মিথ্যা পোস্ট দেন। যা আদালতে আমরা আটজন সাক্ষী ও যুক্তি উপস্থাপন করে মিথ্যা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তার মতো একজন দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্যের এ ধরনের মন্তব্য ঠিক হয়নি। এ রায় জনগণের সচেতন হওয়ার একটি বার্তা। যেন কেউও সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হুইপ ও সংসদকে নিয়ে এমন মিথ্যা মন্তব্য না করতে পারে।
চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকা আয় করেন বলে অভিযোগ করেন পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিম।
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী জুয়ার আসর থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছেন এমন পোস্ট দেন ইন্সপেক্টর মাহমুদ সাইফুল আমিন। এতে হুইপের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এ ঘটনায় একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলা করেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(১)ক, ২৫ (২),৩১(১)(২) ধারায় মামলাটি করা হয়। আদালত পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে তদন্ত করে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মাহমুদ সাইফুলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় হুইপ শামসুল হক চৌধুরীসহ ৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
আসামি সাইফুল একসময় চট্টগ্রামের হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন।
২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শকের (এআইজি-পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-২) পক্ষে এআইজি (পিআইও-১) আনোয়ার হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মাহমুদ সাইফুলকে বরখাস্ত করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ, জনসম্মুখে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করা তথা অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) মোতাবেক ঢাকার উত্তরা ১৩ এপিবিএনে কর্মরত সাইফুল আমিনকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন।