চট্টগ্রাম উত্তর ও মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণার সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সম্মেলনের প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর আগামি সপ্তাহের যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে এই দুই সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি।
ভয়েস অফ এশিয়াকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
নভেম্বর’২২-এর মাঝামাঝিতে ঘোষিত হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি। কমিটি ঘোষণার পরপরই বিদ্রোহের অনলে পুড়তে থাকে ঘোষিত কমিটি। পদত্যাগের হিড়িক পড়ে নতুন কমিটিতে। ক্ষোভ-বিক্ষোভে এমনই এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে একটি আনন্দ মিছিল পর্যন্ত করতে পারেনি নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সূত্রগুলো বলছে, এরকম পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যাতে এই দুটি কমিটি ঘোষণার পর তৈরি না হয় সেজন্য কমিটি গঠনে বাড়তি সময় নেওয়া হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ত্যাগী, পরিশ্রমী যুব সংগঠকদের সমন্বয়ে সর্বজনগ্রাহ্য কমিটি যাতে উপহার দেওয়া যায় সেই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে কমিটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের পুত্র দিদারুল আলম দিদারকে সভাপতি ও মাহবুবুল হক সুমনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তারপরও কমিটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কে বা কাহারা আসছেন নগর যুবলীগের দায়িত্বে।
উল্লেখিত দু”জনই বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে সেই কমিটিতে মাহবুবুল হক সুমনের নাম ছিল দিদারের আগে। ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা কমিটিতে হঠাৎ করেই অন্তর্ভুক্ত হন মাহবুবুল হক সুমন।
জানা যায়, দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী সংস্থার প্রধান মাহবুবুল হক সুমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মূলত তার হস্তক্ষেপে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পেতে যাচ্ছেন সুমন।
অন্যদিকে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির সাথে ছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মন্ত্রী এম এ মান্নানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। শেখ মনির ছোটভাই শেখ সেলিমও সেই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
বর্তমান যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে আছেন শেখ মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ সেলিমের ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম। শুরু থেকে তারাও চাইছেন দেশপ্রেমিক ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নানের ছেলে দিদারের হাতেই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নেতৃত্ব তুলে দিতে। সেই মানসিক সেটআপে শেষ মুহূর্তে যুক্ত হয়েছেন মাহবুবুল হক সুমন। দিদারের সিনিয়র হলেও নানান সমীকরণে সেক্রেটারি পদেই সুমনকে হয়তো তৃপ্ত থাকতে হতে পারে শেষ পর্যন্ত।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলমকে নিয়ে শুরু থেকে যুবলীগ নীতিনির্ধারণী মহলের তৎপরতা ছিল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু নানা কারণে মাঝপথেই তাতে ছেদ পড়ে। রাশেদকে পেছনে ফেলে আলোচনায় উঠে আসে অন্য নাম। সাম্প্রতিক সময়ে সেই রাশেদই আবার আলোচনার শীর্ষে। কেন্দ্র যে পছন্দে কমিটি একপ্রকার চূড়ান্ত করেছে তাতে এস এম রাশেদুল আলম আছেন সভাপতি হিসেবে আলোচনার শীর্ষে। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই মুহূর্তে আলোচনায় আছে সন্দ্বীপের মাইটভাঙা ইউনিয়নের আলোচিত-সমালোচিত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট নুরুল মোস্তফা মানিক।
সূত্র মতে, হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলমকে সভাপতি ও তার সাথে মিজান অথবা মানিক যে কাউকেই সাধারণ সম্পাদক করে আগামী সপ্তাহের যে কোনোদিন ঘোষণা হতে পারে বহুল প্রত্যাশিত উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি।
একাধিক সূত্র বলছে, এবার কমিটিতে বেশ কিছু বিষয়ে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং মাঠের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও খুব সর্তকতা অবলম্বন করেছেন নীতিনির্ধারক মহল। হঠাৎ মাঠে সরব হওয়া, কমিটিতে পদ চাওয়া নেতাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে বলেও জানান নির্ভরশীল সূত্র।
এ ব্যাপারে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে যুবলীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লেখিত তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন খুব শীঘ্রই ঘোষিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি।