ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে সোয়া এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন ক্যাশিয়ার। এ খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার চট্টগ্রাম নগরীর চকাবাজার এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এক শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি সোনা উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ইসলামী ব্যাংকের ওই শাখায় এসব স্বর্ণ রাখেন রোকেয়া বারী নামে এক নারী। নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা তিনি।
গত বুধবার (২৯ মে) লকার খুলে স্বর্ণ কি অবস্থায় আছে জানতে ব্যাংকের ওই শাখায় যান তিনি। লকারে স্বর্ণ দেখতে গেলে উধাও হওয়ার বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন।
লকারে স্বর্ণ না পাওয়ায় ওই দিনই তিনি চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে যান। এরপর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে থানা থেকে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ডায়েরি না করে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আগামী সোমবার (৩ জুন) আদালতে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চকবাজার থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার একটি বিষয় নিয়ে গত বুধবার আমাদেরকে জানায় ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার এক গ্রাহক। আমি এবং ওসি স্যার সাথে সাথে ব্যাংকে যায়। তারা আমাদের কাছে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি এটা সাধারণ ডায়েরি করার বিষয় নয়। মামলা করতে হবে। কিন্তু শনিবার (১ জুন) পর্যন্ত তারা থানায় মামলা করতে আসেনি। তাছাড়া বিষয়টি পুরোপুরি ব্যাংকের ইন্টারনাল বিষয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকেও মামলা করতে পারে। এরপর আমরা তদন্তে যাব। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও আমাদের কাছে কোন মামলা করেনি।
জানা গেছে, মোট ১৪৯ ভরি স্বর্ণ লকার থেকে উধাও হয়ে যায়। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এক ভরি সোনার বাজারমূল্য ১ লাখ ১৭ হাজার ১৭৭ টাকা। বর্তমান মূল্য হিসাবে উধাও হওয়া স্বর্ণের দাম দাম প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। লকার থেকে উধাও হওয়া ১৪৯ ভরি স্বর্ণের মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ)। যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের ৪টি জড়োয়া সেট। যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট। ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল। যার ওজন ১১ ভরি।
রোকেয়া বারীর ছেলে রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক শনিবার (১ জুন) রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২৯ মে লকারে স্বর্ণ না পেয়ে আমার মা ব্যাংকে জ্ঞান হারান। পরে পরিবারের সদস্যরা তুলেন নিচ থেকে। প্রায় দেড়শ’ ভরি স্বর্ণ ছিল লকারে। ঘটনার পর আমার মা ও আমি চকবাজার থানায় যায় অভিযোগ দিতে। সেখানে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়া হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী সোমবার (৩ জুন) এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করবো। আমাদের বিশ্বাস ব্যাংকের লকার ইনচার্জ স্বর্ণগুলো উধাও বা গায়েব করেছেন। আমরা এ ঘটনার শাস্তি চাই। ব্যাংকে রক্ষিত গ্রাহকের সম্পদ এভাবে গায়েব বা উধাও হওয়া ভয়াবহ ব্যাপার। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে বলেছে। আমরা ব্যাংকের তৎপরতা পর্যবেক্ষণে আছি।
গ্রাহক রোকেয়া বারী বলেন, ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখায় ১৭ বছর ধরে একটি লকার ব্যবহার করে আসছি। ওই শাখায় আমার একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। কিন্তু গত ২৯ মে দুপুর দেড়টায় কিছু স্বর্ণ আনতে যাওয়ার পাশাপাশি এসব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে গিয়েছি। এসময় লকারের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার রুমে দরজা খোলার পর দেখতে পাই আমার লকার খোলা। পরে আমি বিষয়টি দ্রুত চকবাজার থানার ওসিকে জানাই। তিনি দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখতে পান আমার লকারে মাত্র ১১ ভরি স্বর্ণ আছে। আমার বিশ্বাস ব্যাংকের লোকজন যোগসাজশে স্বর্ণগুলো গায়েব করেছে।
এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার ম্যানেজার শফিকুল মওলাকে ফোন করলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছে, তবে মোবাইলে কিছুই বলা যাবে না। অফিসে আসেন, কথা বলব।
ব্যাংকের নর্থ জোন ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরুল হোসাইনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।