ঢাকা, শনিবার - ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিটিং সার্ভিস নামে বিপজ্জনক মোড়া সার্ভিস

ছবিঃ সংগৃহীত

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

গাজীপুরের ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ সিটিং সার্ভিস নামে মোড়ায় যাত্রী বহন করছে।

এছাড়াও দূরপাল্লার বাসে আসনের বাইরে যাত্রী তুলতে যোগ হয়েছে মোড়া। যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলেই দুই পাশের আসনের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায় মোড়া পেতে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এটি বিপদের কথা, মানছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। কিন্তু ঘুম ভাঙছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর। এই প্রবণতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই।

আবার যাত্রীরা বিরক্ত হলেও টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকদের ‘দাপটে’র কাছে তারা অসহায়। শ্রমিকরা কথা বলে ‘অপমান’ করে, কে জানে আবার গায়ে হাত তোলে কি না, এই আশঙ্কাতেও মুখ বুঝে থাকে তারা।

আর যারা দ্রুত বাড়ি পৌঁছতে মোড়ায় চেপে যাচ্ছেন, তারাও উপেক্ষা করছে জীবনের ঝুঁকি। দ্রুতগামী বাস হঠাৎ ব্রেক কষলে ছিটকে পড়ে মাথায় যে প্রাণঘাতি আঘাত লাগতে পারে, সে আশঙ্কা গায়েই মাখছে না মোড়ায় চাপা যাত্রীরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্র এআরআই এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বছরে দুই একবার এই রকম ঘটনা তারা (পরিবহন মালিকরা) করে। একেক কোম্পানির বাসের এক এক রকম আসন ডিজাইন আছে। এর বাইরে কিছু করলেই সেটা অবৈধ; এটা একটা অপরাধ।’

আরও পড়ুন  বেইজিংয়ের আদলে নির্মাণ হবে ঢাকার পাইকারি কাঁচাবাজার: মেয়র আতিক

‘তারা অতি মুনাফার লোভে এটা করে থাকে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।’

‘আমাদের দেশের রোডে এসব ফিটনেস দেখার মত তেমন কোন মনিটরিং নেই। ফলে ভয় পেয়ে যে তারা এসব বন্ধ করবে সেই ভয়টা তাদের মধ্যে নেই। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে।’

শুক্রবার থেকে লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। টানা নয় দিনে মাঝে সোম এবং বৃহস্পতিবার কার্যদিবস। এই দুই কার্যদিবসের একদিন ছুটি মিললেও পাঁচ থেকে ছয় দিন মিলবে ফুরসত।

আর রোজার আগেই ঈদের মতো ছুটি পেয়ে যাওয়ায় রাজধানী থেকে বিভিন্ন এলাকায়, বিনোদনকেন্দ্র বা বাড়িমুখী মানুষের স্রোত শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।

আর যাত্রী বেশি দেখে বাসে বসে গেছে মোড়া। এটি আইনত অবৈধ, মানছে বাস মালিক সমিতিও। তবে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী বহন বন্ধে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই।

আরও পড়ুন  সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে কমিশন: রাষ্ট্রপতি

উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার বাসে এই মোড়া পাততে দেখা গেছে।

কল্যাণপুরের একটি বাসের কাউন্টারের কর্মী বিপ্লব আহমেদ ঢাকাটাইমসকে জানান, বেশ কিছু বাসের মালিক ইঞ্জিন কভার ছাড়াও বাসের মধ্যে হাঁটার জায়গা কাঠের বা প্লাস্টিকের টুল বা মোড়া দিয়ে যাত্রী নিয়ে থাকে।

‘বিশেষ করে ঈদ বা দুই তিনদিনের ছুটিতে এগুলো বেশি দেখা যায়। অনলাইনে যারা টিকিট বিক্রি করে তারা এইগুলো করতে পারে না। তবে যারা কাগজে টিকিট বিক্রি করে তারা এসব কাজ করে থাকে।’

এই কাজ মালিকদের ইন্ধন ছাড়া হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন এই পরিবহন কর্মী। বলেন, ‘দূরপাল্লার পরিবহনের চেকার থাকে। বাসের যাত্রী বেশি থাকলে জরিমানা গুনতে হয়। তাই মালিকে ইন্ধন ছাড়া ওভাবে লোক নেওয়া হয় না।’

‘আর সব পরিবহনগুলো এসব করে না। মাঝারি ও নিন্মমানের দূরপাল্লার বাসগুলো এসব করে থাকে।’

মোড়ায় টিকিটের দাম কিছুটা কম হলেও তা বলার মতো নয় বলেও জানান বিপ্লব আহমেদ।

আরও পড়ুন  সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রতিরোধ করা সকলের দায়িত্ব: নওফেল

জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টুল বা মোড়া দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এগুলো মালিকের ইন্ধনে হতে পারে। তবে এসব বন্ধে মালিক সমিতি থেকে সব সময় নিষেধ করা হয়।’

‘আপনারা যদি নিষেধই করবেন, তাহলে এসব চলছে কীভাবে-এমন প্রশ্নে এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘কেউ যদি এমনটি করে থাকে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

‘এসব বন্ধে বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগসহ বিভিন্ন সময় র‌্যাবের পক্ষ থেকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। মালিক সমিতি এই বিষয়ে সব সময় কঠোর।’

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবে ঈদ এবং পূজার সময় সেগুলো বেশি হয়ে থাকে। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা উচিত।’

এ বিষয় জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

ট্যাগঃ