সীতাকুন্ডের অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় হাসপাতালের বিছানায় রোগীরা কাতরালেও তাদের এখন পর্যন্ত দেখতে আসেননি কারখানাটির মালিকপক্ষের কেউ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হতাহতদের স্বজনেরা।
হাসপাতাল দূরে থাক, কারখানাটিতে উদ্ধারকাজ চলার সময়ও মালিকপক্ষের কেউ সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ তাদের।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় চমেক হাসপাতালে সবমিলিয়ে ২৬ জনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। বাকি ২০ রোগীর মধ্যে দুজন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। অন্যদের মধ্যে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ৭ জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড ৩ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২ জন চিকিৎসাধীন। আইসিইউতে থাকা একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
দুর্ঘটনাকবলিত প্ল্যান্টটিতে অক্সি-এসিটিলিন গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এটি মূলত শিল্পে ব্যবহার করা অক্সিজেনের প্ল্যান্ট। অক্সি-এসিটিলিন গ্যাসের শিখা দিয়ে লোহার পাত কাটা হয়। একই সঙ্গে রি রোলিং মিলে লোহা গলাতেও এটি ব্যবহার করা হয়। আশপাশের জাহাজভাঙা শিল্প ও স্টিল রি-রোলিং মিলে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে। তিন পালায় (শিফট) কারখানাটিতে শ্রমিকেরা কাজ করতেন। বিকেলের পালায় শ্রমিকেরা সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরার কাজ করছিলেন। এমন সময় ঘটে বিস্ফোরণ।
জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি কারখানাটি গড়ে তোলেন। শফির মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে মামুন উদ্দীন, আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন কারখানাটির হাল ধরেন। এ কোম্পানির সীতাকুণ্ডের জাহানাবাদে এস ট্রেডিং নামে শিপইয়ার্ড আছে। বানু বাজার এলাকায় সীমা স্টিল রি-রোলিং মিল নামে আরেকটি কারখানারও মালিক তারা।
মামুন উদ্দীন কারখানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ঘটনার পর মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মালিকপক্ষের অন্য কাউকেও ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।
বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিকপক্ষের কাউকে আমরা দেখতে পাইনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীও কাউকেই ঘটনাস্থলে পাইনি। আমরা মালিকদের ট্রেস করার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. আব্দুল হালিমও ঘটনাস্থলে মালিকপক্ষের কাউকি পাননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। সকাল থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষের কাউকে পাইনি। তারা কেউ দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে আসেননি।