চট্টগ্রামে ‘ডট গ্যাং’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের লিডারকে ছয় সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর চকবাজার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং গ্রুপকে শনাক্ত করেছি। এর মধ্যে একটি গ্যাংয়ের নাম ‘ডট’ অথবা ‘সুপ্রিমেসি’। বেশ কিছু দিন ধরে তাদের ওপর র্যাব সদস্যরা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গ্রুপটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শেয়ার করে তারা।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, গত দেড় বছর আগে তাদের সৃষ্টি হয়। গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্য আগে ‘‘ছুরিয়াটি’’ নামের আরেকটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিল। পরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে তারা আলাদা হয়ে যায়। ডট গ্যাং গ্রুপের গ্যাং লিডার মিম। তার বাবা চিকিৎসক এবং মা চাকরিজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল ছোট। তার গ্যাংয়ে কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে সক্রিয় সদস্য ৮-৯ জন। গ্রুপটি যেখানে মারামারি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেখানেই সেখানে এই ৮-৯ জন উপস্থিতি হতো।
তিনি বলেন, মূলত চাঁদাবাজি, জমি দখল, আধিপত্য বিস্তার, ইভটিজিং এবং সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দ্ব এ ধরনের কর্মকাণ্ডে গ্রুপটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্বনামধন্য স্কুলের ছাত্র। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো ফেসবুকে শেয়ার করতো। এ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য ‘‘হিরোইজম’’ বা ‘‘হিরো’’ হয়ে ওঠার প্রবণতা থেকে এ গ্রুপে যোগদান করে।
র্যাব দাবি করছে, গ্রেফতাররা জানিয়েছে, গত দেড় বছরে তারা ১২ থেকে ১৪টি মারামারিতে অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে তারা ছুরি-চাকু, হকিস্টিকসহ নানা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অনেককেই আহত করেছে। গ্রুপের মদদদাতা হিসেবে আমরা তথাকথিত এক বড় ভাইয়ের তথ্য পেয়েছি। তাকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়ার পর তাকেও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, কিশোর অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য র্যাব শুরু থেকে কাজ করে আসছে। চট্টগ্রাম মহানগরকে কিশোর গ্যাং মুক্ত রাখার জন্য যে ধরনের অভিযান প্রয়োজন তা আমরা করবো। এই সাত জনের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা নেই। তবে গ্যাং লিডারের বিরুদ্ধে একটি জিডি রয়েছে। অভিভাবকরা মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে তাকে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা না থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের সমাজে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের আইনের আওতায় আনতে চাই না আমরা। তাদের অপরাধ মানুষ ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। এ সুযোগে প্রভাবশালী যাদের ছত্রছায়ায় তারা কাজ করেন তারা এ সুযোগ নেন।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে বিভিন্ন নামে ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং আছে। এর মধ্যে চকবাজার এলাকা কেন্দ্রিক পাঁচটির বেশি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। তথাকথিত বড় ভাইদের বিষয়ে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। তাদের অনেকেই সাবেক রাজনীতিবিদসহ প্রভাবশালী।