পাঠ্যপুস্তক কারিকুলাম নিয়ে সরকারের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, স্বকীয়তা ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষায় কথা বলছি, কথা বলতে হবে। সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেউ রক্ষা করবে না। বাইরে থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের কাজ করে দেবে না। রুখে দাঁড়াতে না পারলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মুক্তি মিলবে না।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আমাদের নতুন করে শিক্ষা দিচ্ছেন। নতুন করে একটি জাতি তৈরির পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন। সেই জাতি হচ্ছে নিজের অস্তিত্বহীন, পরিচয়হীন নতজানু জাতি। আবার বলছেন ইস্যু তৈরি করবেন না। আমাদের কথা হচ্ছে, আপনি আমার শেকড় ধরে টান দিবেন; আমরা কথা বলব না? অবশ্যই এটা সবচেয়ে বড় ইস্যু জাতির অস্তিত্বের ইস্যু।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে লড়াই টা শুধু গণতন্ত্র, বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের লড়াই নয়। লড়াইটা জাতির অস্তিত্বের। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনোটাই হবে না।
সরকারের সমালোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা বলছেন দেশ ডিজিটাল করেছি এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন। আপনাদের স্মার্ট বাংলাদেশ তো সবকিছু নিয়ে ভেঙে পড়ে যাওয়া। আসল কথা হলো জোড় করে চাপিয়ে কোনো কিছু হয় না। যা খুশি করে যাচ্ছে, দিনকে রাত…। মনে হয় বেঁচে নেই, মরেই গেছি। কেমন করে বাঁচব? সেজন্য যারা মানুষ গড়ার কারিগর তাদের বলছি-আপনাদের জেগে উঠতে হবে। আপনারা জেগে উঠলে আমরা সাহস পাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার আমাদের খোলনলচে পাল্টে দিতে চায়। যার প্রমাণ এই পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। আজকে যেসব সন্তান যারা প্রাথমিক শিক্ষা নেয় সেটা তার সারাজীবনের জন্য থেকে যায়। এই শিক্ষাকে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার মূল। দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। যদিও পাকিস্তান আনলেও এ ধরনের পরীক্ষা ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। শুধু বারবার পরীক্ষা ও শিক্ষানীতি হচ্ছে। এখনো সেটা চলছে।’
তিনি বলেন, আজকে পাঠ্যপুস্তকে অজস্র ভুলে ভরা ইতিহাস ও তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। আর সেগুলোই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে। যারা কারিকুলাম তৈরি করে কেউ কিন্তু ভাবে না যে ছেলেমেয়েরা কী শিখছে? জাতির মূল জায়গা হলো শিক্ষা। আর সেখানেই হাত দিয়েছে সরকার। এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
বিএনপির উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সহযোগিতায় ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক: দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শাহ শামীম আহমেদ। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের কার্বনডাই অক্সাইড, মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্কিত তত্ত্বসহ বেশকিছু বইয়ের অসংখ্য ভুল এবং অসত্য তথ্য তুলে ধরেন।